গল্প-ঃ দিন বদলের হাওয়া (চতুর্থ ও শেষ পর্ব)

image editor output image1246507164 1635362066179
Read Time:11 Minute, 3 Second

শাকিলকে দেখে আমি তাড়াতাড়ি উঠে বসি।আমার দিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হঠাৎ এভাবে চলে এলে? আম্মা কী ঠিক আছেন? ও খুব অবাক হয়ে বলল,এতকিছুর পরও তোমার মনে এত মায়া? সত্যি আমার ভুল হয়ে গেছে। তোমার মতো এত ভালোবাসা নেই আমার মনে।এতকিছু ভাবতে পারি না।ছোট থেকে বাবাকে শুধু দায়িত্ব পালন করতে দেখেছি।নিজেকেও সময়ের সাথে বদলাতে পারিনি। মা বারবার বলত, চাকরি করে বউ।সবকিছু নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে রাখতে চাইবে। আমি আসলে তোমাকে বুঝতে পারিনি।
আমি বললাম, কী বলতে চাচ্ছো? আমি তোমার কাছে বেশি কিছু চাইনি শুধু ভালোবাসা আর সহানুভূতি চেয়েছি। এমন একটা সময় পড়ি দিচ্ছি যে তোমাকে আমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল।

শাকিল বলল, আমি অনেক কিছু বুঝতে পারতাম।কিন্তু কেন যেন আমি শক্ত হয়ে থাকতাম।মনে হত তোমার কাছে নত হয়ে যাবো যদি নিজেকে প্রকাশ করি।একটা পুরুষ নিজেকে সবসময় প্রকাশ করতে পারে না। মা আর তোমার মাঝে ঝুলে থাকতাম।এই বয়সে মাকে কষ্ট দিতে চাই না। মা সারাজীবন কষ্ট করে গেছে। নিজের সুখের কথা না ভেবে আমাদের কথা ভেবেছে।তাছাড়া আমি ছোট বলে আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা দিয়েছে। তোমাকে প্রাধান্য দিলে মা কষ্ট পায়। মায়ের কাছে আমি ছাড়া এখন কেউ নেই। সবাই দূরে থাকে। আমার দাদী যতদিন বেঁচে ছিলেন মা’কে কোনকিছু স্বাধীন ভাবে করতে দেয়নি। এইজন্য মা তোমার প্রতি কর্তৃত্ব দেখাতো। আমিও মায়ের কথা ভেবে কিছু বলতে পারিনি।আর আমি ছোট থেকেই অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ। তোমার প্রতি অনেক অন্যায় করেছি জানি।

এক সপ্তাহ আগে আমার বন্ধু তানিমের বাচ্চাটা ওর বউয়ের পেটেই মরা গেল।আর দুই তিনদিন পরেই হওয়ার কথা ছিল। অথচ হাতে এলো লাশ হয়ে।দাফন করার পর থেকে ওর বউটা প্রায় পাগল পাগল হয়ে গেছে। ওরও মাথা ঠিক নেই। খুব কান্নাকাটি করছে।গতকাল রাতে খুব খারাপ স্বপ্ন দেখেছি।হঠাৎ ঘুম ভেঙে তোমার মেসেজটা পেলাম।মনটাকে আর ধরে রাখতে পারিনি।ভোর হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম। এসে তোমার ঘুমন্ত মুখটা দেখে খুব মায়া হলো।সত্যি ক্ষমা চাই। জানি হয়তো ক্ষমা করতে পারবে না।আমি ছোট বেলা থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখি।অনেক কিছু বলতে পারি না।

আমি সত্যি আজ অন্য শাকিলকে দেখছি।ও কোনদিনই এত কথা বলেনি আমার সাথে বিয়ের পর। ও যদি আরও আগে আমাকে সব বলতো আমি ওকে আরও গভীরে গিয়ে বুঝতে চেষ্টা করতাম।আমার আর ওর পরিবারের মাঝে কাউকেই কিছু বলতে পারেনি।আঘাত গুলো শুধু আমাকেই করে গেছে।

শাকিল আরও বলল, ভার্সিটিতে পড়ার সময় একটা মেয়েকে প্রচন্ড ভালোবাসতাম।কিন্তু মা কিছুতেই রাজি হয়নি আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিতে।নানান অজুহাত দিয়ে আমাকে সরিয়ে আনলো।নিজেকে কষ্ট দিয়েছে মা।দুই দিন খায়নি আমি ঐ মেয়েকে বিয়ে করবো বলাতে।বাধ্য হয়ে তাকে চলে যেতে বলি।তোমাকে আমার ভালোলাগে।কিন্তু আমি সত্যি আমার সন্তানকে ভালোবাসি।আজ মাকে বলে এসেছি আমাকে মা যেন নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসে।আমিও আমার সন্তানকে তেমনি ভালোবাসি। আমি তোমার প্রতি অনাদর করেছি এটা মানছি।ক্ষমাও চাচ্ছি এসবের জন্য।প্লিজ আমার সাথে চলো।আমার খুব একা লাগে।প্রতিদিন তোমাকে মনে পড়ে। সবাই বলেছে তুমি একাই চলে আসবে।কিন্তু আমি তোমাকে ফিরে চাই। তাই নিজের দোষ স্বীকার করছি।

আমার সত্যি ওর জন্য কষ্ট হচ্ছিল। মেয়েরা হয়তো এমনি।নিজের সব কষ্ট সামান্য ভালোবাসায় ভুলে যায়।শাকিলের সহজ স্বীকারোক্তি যেন আমার মনে শাকিলের জন্য ভালোবাসা বাড়িয়ে দিল। তবে নিজের আর বাচ্চা জন্য আমারও কিছু বলার ছিল শাকিলকে।আমার সারাজীবনের স্বপ্ন আর বাচ্চার ভবিষ্যৎ আছে। নিজেকে আর অসম্মানিত হতে দিতে চাই না। শাকিল তার মা’কে সাপোর্ট করবে এটা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার আর শাকিলের নিজস্ব একটা জগৎ আছে। সেখানে কারো দখল সংসার ভেঙে দিতে পারে। দুজনের মনে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া আমি আবারও সেদিন দেখতে চাই না যা আমি চাকরি চলে যাওয়ার পর দেখেছি।

আমি শাকিলের হাত ধরে বললাম, আমি বুঝতে পারছি তুমি হয়তো ইচ্ছা করে এসব করোনি।বা এখন নিজের ভুল বুঝতে পারছো। আমি সত্যি এতগুলো দিন অনেক কষ্ট পেয়েছি। একটাবারও তুমি আমাকে বুঝতে চেষ্টা করনি।আমার চাকরি ছাড়ার পর আমি মানসিক ভাবে কষ্ট পাই।বাচ্চা ও সংসারের জন্য তোমার কথায় চাকরি ছাড়লাম।কিন্তু তোমরা কেউ তার মূল্য দিলে না।উল্টো সবকিছু নিয়ে কথা শোনাতে লাগলে।এই সময় তোমার সহমর্মিতা আমার খুব প্রয়োজন ছিল। তার পরিবর্তে আমি বাজে ব্যবহার পেলাম।তারপরও এখানে এসে ভেবেছিলাম তুমি আসবে।আমি তোমার অপেক্ষা করেছি।বাচ্চার দায়িত্ব শুধু আমার একার না।তোমরাও অনেক কিছু বোঝার ছিল। আমি চাকরি ছেড়ে ভুল করেছি। আমার স্বপ্ন এটা।আমি নিজের পায়ে দাঁড়াবো। তুমি ভেবে দেখো আমাকে সত্যি কী সাথে নিয়ে যেতে চাও? আমি কোনো অশান্তির মাঝে সন্তানকে মানুষ করতে চাই না।

শাকিলও আমার হাতটা মুঠোয় নিয়ে বলল, আমি সত্যি চাই তুমি আমার সাথে চলো।তা না হলে আমিও এখানেই থেকে যাবো।আাজ না হোক কাল মা-ও তাহলে চলে আসবে এখানে। মা নিজে বলেছে তোমাকে যেতে।তুমি বাবু হলে চাকরি করো।আমি না করবো না। যতটুকু পারি সাহায্য করবো আমি। আমি মা’কে কেও বোঝাতে চেষ্টা করছি। আজ অনেক হালকা লাগছে নিজেকে। চলো আমার সাথে।

বাবা মা’কে সব কিছু শাকিল নিজেই বুঝিয়ে বলল।বাবা শুধু বলল, আমি মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিয়েছি বাবা।তার ভালো মন্দ দুটোই দেখতে হবে তোমাকে।তাছাড়া তোমার নিজের সন্তান আসছে।তার কথা তোমার মনে রাখতে হবে।পারিবারিক অশান্তির মধ্যে সন্তান সুন্দর ভাবে বড় হতে পারে না।আমি মেয়েকে আজও এখানে রাখতে পারি।তবে সে এখানে তোমাকে ছাড়া ভালো থাকবে না।আর একজন সন্তানের জন্য বাবা মা দুইজনের ভালোবাসা দরকার। যে কোনো সময় আমাদেরকে ডাকলেই পাশে পাবে।

আমি চলে এলাম শাকিলের সাথে। শাকিল আগের চেয়ে একটু হলেও আমাকে বুঝতে পারে।কিন্তু আমার শাশুড়ি মা আগের মতোই আছে। আমাদের ফুটফুটে একটা ছেলে সন্তান হলো।শাকিল সত্যি ছেলেকে অসম্ভব ভালোবাসে।আমার শাশুড়িও তার নাতি বলতে অজ্ঞান।আগের চেয়ে আমার প্রতি একটু নরম হয়েছে। নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি এই পরিবারের সাথে। হয়তো মানিয়ে না নিলে সংসার থাকতো না আজ। চলে গেলে আমি কী পেতাম জানি না।তবে আজ আমি নিজেকে নিয়ে ভাবতে পারি।এটতেও মানসিক শান্তি লাগে।জীবনে অনেক কিছু ছাড় দিতে হয়।তবে নিজেকে বিলুপ্ত করে নয়।নিজেকে সবার কাছে ছোট করে নয়।

বাবুর বয়স আট মাস হলে আমি আবারও ঐ অফিসে চাকরিতে যোগ দেই।আমার এক দূরসম্পর্কের খালাকে এনে আমার সাথে রেখেছি।আমার শাশুড়ি আর খালা আমাদের ছেলে রাফিকে দেখাশোনা করে। অফিস থেকে এসে শাকিল ছেলেকে নিয়ে খেলে।সবাই হয়তো সব দিক থেকে পারফেক্ট হয় না।শাকিল স্বামী হিসাবে যেমনই হোক।বাবা হিসাবে সত্যি সে যোগ্য বাবা।একটাতে সুখ খুঁজে নেই আমি। আমার শাশুড়ি আমার মা হতে পারেনি।কিন্তু আমার ছেলের ভালো দাদী হতে পেরেছে। এখানেই সন্তুষ্টি আমার।কিছুটা হলেও দিন বদল হয়েছে। আমার সংসারে দিন বদলের হাওয়া লেগেছে। আমি আমার মতো করে আমার সংসার গুছিয়ে নিতে শুরু করেছি।

জীবনে সবকিছু ছেড়ে দিতে নেই। কিছু সময় নিজের জন্য শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হয়।একটা মেয়ে বাবা মায়ের সাহায্য না পেলে সত্যি অসহায়। বিপদে বা কষ্টে যেন মেয়েরা বাবা মা’কে পাশে পায়। সন্তান কষ্টে বা বিপদে বাবা মা’কেই কাছে চায়।তাদের দেওয়া সাহস ও ভালোবাসায় আবারও নতুন করে বাঁচতে অনুপ্রেরণা পায়।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

28 thoughts on “গল্প-ঃ দিন বদলের হাওয়া (চতুর্থ ও শেষ পর্ব)

  1. Thank you, I have recently been looking for information about this subject for ages and yours is the best I’ve found out till now. However, what concerning the conclusion? Are you certain about the source?

  2. Together with every thing that seems to be building within this specific subject material, all your perspectives are actually very refreshing. Having said that, I beg your pardon, but I can not give credence to your whole strategy, all be it stimulating none the less. It looks to us that your opinions are not completely rationalized and in reality you are your self not even totally confident of the assertion. In any case I did enjoy reading it.

  3. I got what you mean , thankyou for putting up.Woh I am glad to find this website through google. “The test and use of a man’s education is that he finds pleasure in the exercise of his mind.” by Carl Barzun.

  4. I would like to thnkx for the efforts you have put in writing this blog. I am hoping the same high-grade blog post from you in the upcoming as well. In fact your creative writing abilities has inspired me to get my own blog now. Really the blogging is spreading its wings quickly. Your write up is a good example of it.

  5. Good post. I be taught one thing more challenging on completely different blogs everyday. It can all the time be stimulating to read content material from other writers and observe a little bit one thing from their store. I’d desire to use some with the content on my blog whether you don’t mind. Natually I’ll give you a hyperlink on your web blog. Thanks for sharing.

  6. I was just looking for this info for some time. After six hours of continuous Googleing, at last I got it in your website. I wonder what’s the lack of Google strategy that do not rank this kind of informative web sites in top of the list. Usually the top websites are full of garbage.

  7. We are a group of volunteers and opening a brand new scheme in our community. Your website provided us with helpful information to work on. You’ve done an impressive process and our entire group might be grateful to you.

  8. The next time I read a blog, I hope that it doesnt disappoint me as much as this one. I mean, I know it was my choice to read, but I actually thought youd have something interesting to say. All I hear is a bunch of whining about something that you could fix if you werent too busy looking for attention.

  9. I’d should test with you here. Which is not something I often do! I get pleasure from studying a publish that may make people think. Additionally, thanks for allowing me to comment!

  10. I don’t even know how I ended up right here, however I believed this publish used to be good. I do not realize who you’re but certainly you’re going to a well-known blogger when you aren’t already 😉 Cheers!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social profiles