আমার স্বামী মারা গেছে গতকাল রাতে। আজ আমি একা নিঃসঙ্গ জীবনের ভয়ে কুঁকড়ে গেছি।মানুষটা ছাড়া কীভাবে আমি বেঁচে থাকবো তা আজ বুঝতে পারছি না। জীবনের সব সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে এতগুলো বছর ধরে চলে আসলাম।গেল তো আমাকেও নিয়ে যেত।কেন রেখে চলে গেল? আমার আর কী দেখার বাকি আছে জীবনের? চার ছেলে মেয়ে যে যার মতো চলে গেছে। আজ আমি হয়তো তাদের কাছে দায়িত্ব বা বোঝা হয়ে থাকবো।
অসুস্থ অবস্থায় কতবার সবাইকে দেখতে চেয়েছে। কেউ এলো না দেখতে।সবার কত কাজ।এত ব্যস্ত তারা।যে বাবা পৃথিবীর আলো দেখালো।মানুষের মতো করে মানুষ করলো আজ তার দাম নেই। ছোট থাকতে আঁচল ধরে রাখে।সেই সন্তান বড় হলে হাতটাও ধরে রাখতে চায় না।এই বয়সে এসে একাকীত্বের সাথে চলতে হয়।জীবন কতটা কঠিন লাগে এই বয়সে তা শুধু সময় এলেই বোঝা যায়।
আমার ছেলে মেয়েরা তার বাবার মৃত্যুর পর এসে কত কান্নাকাটি করলো। অথচ তাদের বাবা এক বুক কষ্ট নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল।শেষ সময়ে নিজের সন্তানেরা পাশে থাকলো না।থাকলো বড় নাতি মনির আর পর মানুষ। যাদের সাথে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। সেই তো এলো সবাই কেন মানুষটা বেঁচে থাকতে এলো না?যাদের জন্য সারাজীবন কষ্ট করলো তাদের কাছে থেকে সেবা তো দূরের কথা ভালোবাসা টাই পেল না।
আমার মেয়ে এসে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। বলল, মা বাবা তো চলে গেল।আমরা একা হয়ে গেলাম।আমি মেয়েকে স্বান্তনা দিয়ে বললাম, তোমার বাবা থাকলেও তোমরা কাছে আসনি।তোমাদের জীবনে এত ব্যস্ততা। তার শেষ সময়ে পাশে থাকতে পারলে না।তোমরা একা না। মানুষটা আমাকে একা করে চলে গেছে। মেয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো কতটা কষ্টে বলেছি কথা গুলো। ঘরে সবাই ছিল তারাও বুঝে নিল।
আমি সবাইকে বললাম, তোমরা তোমাদের বাবার মৃত্যুর পর এলে দায়িত্ব পালন করতে।এটারও দরকার ছিল না বাবারা।তারচেয়ে কষ্ট করে বাবা বেঁচে থাকতে এসে তাকে দেখে যেতে।সেও খুশি হয়ে পৃথিবী থেকে যেত।তোমারও দোয়া পেতে। আজ বাবা মা বোঝা। এই সময় সবার জীবনে আসবে।আমি আমার শশুর শাশুড়ির দায়িত্ব পালন করেছি।মেয়ে হয়ে যতটুকু পেরেছি বাবা মায়ের জন্য করেছি।কিন্তু আমি যে কষ্ট ভোগ করলাম তার কারণ আমি জানি না।তোমার বাবা তার দায়িত্ব পালন করতে কোনদিন অস্বীকার করেনি।কিন্তু তোমরা তার সন্তান হয়ে তাকে শুধু কষ্টই দিলে। তোমার বাবা যাওয়া সময় শুধু তোমাদেরকে দেখার জন্য আপসোস করে গেছে। তোমাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিল।
আমার সন্তানেরা আমার কাছে এসে বসে ক্ষমা চাইল।আমি বললাম,আমি ক্ষমা করার কে বাবা? তোমার বাবা তোমাদেরকে তার সমস্ত জীবন দিয়ে গেছে। তোমরা তাকে কিছু সময় দিতে পারোনি।কোনদিন আমি বা তোমার বাবা তোমাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা চাইনি বা নেইনি।তোমরা সামনে এগিয়ে গেছো। আমাদেরকে পিছনে ফিরে দেখনি।আমরাও দোয়া করেছি যাতো তোমরা ভালো থাকো।
বড় ছেলে এসে বলল, মা সত্যি আমার ভুল হয়ে গেছে। বুঝতে পারিনি বাবা এভাবে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে আমাদেরকে ছেড়ে। কাজের চাপের জন্য আসবো আসবো করে আসতে পরিনি।আমি ছেলের মাথায় হাত দিয়ে বললাম, বাবা তোমার মনে আছে? তুমি যখনই অসুস্থ হয়েছো তখনই তোমার বাবা ব্যবসা দোকান বন্ধ করে বাসায় তোমার কাছে এসে বসে থাকত। কারণ তার মনে হত তুমি কখনো বেশি অসুস্থ হলে বা কিছু লাগলে যেন সে পাশে থাকে। যাতে তোমার কষ্ট না হয়।তুমি যতবার ঢাকায় অসুস্থ হয়েছো তোমার বাবা তোমাকে গিয়ে নিয়ে এসেছে। তোমাকে কষ্টে কখনো একা রাখেনি।সেই বাবা তার শেষ সময়ে পাশে পায়নি তোমাকে।
মেঝো ছেলে এসে বলল, মা বাবা তো নেই। তুমি এখন আমাদের সাথে থাকবে।বাবা একা চলে গেল।তুমি একা এখানে থাকবে না।আমি তোমাকে নিয়ে যাবো সাথে করে। আমি বললাম, না রে বাবা।আমি এখানেই থাকবো।তোমার বাবা যে মাটিতে শুয়ে আছে। আমি ঐ জায়গা ছাড়া কোথাও যাবো না।প্রতি দিন তাকে কাছে থেকে দেখবো।আর তোমাদেরকে দায়িত্বের বোঝা দিতে চাই না বাবা।তোমার জন্য তোমার বাবার চাকরি চলে গিয়েছিল।তুমি ছোট থেকে খুব রোগা ছিলে।অসুখ লেগেই থাকতো।তোমার বাবা একবার ছুটি না-পেয়ে অফিস থেকে বাড়িতে চলে আসে।অফিসে কিছু না জানিয়ে। তার অনেক ভালো বেতনের চাকরিটা চলে যায়। আমাদেরকে দেখার কেউ ছিল না। তোমার বাবা চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করলো।যাতে পাশে থাকতে পারে সবসময়ই। শিক্ষিত একজন মানুষ যার কিনা সারাজীবন চাকরি করার শখ ছিল। সে ব্যবসা করলো সারাজীবন। তোমার দাদা দাদীর জন্য আমরা গ্রামের বাড়িতে থেকে গেলাম।সেই বাবার জন্য তুমি ছুটি পাওনি বাবা।তোমার সংসারে তুমি সুখী হও বাবা।তোমার বাবা তার দায়িত্ব পালন করেছে।কোনো অভিযোগ করেনি সে।
মেয়ে দুটো এসে জড়িয়ে ধরে বলল, মা এসব বললে এখন কষ্ট আরও বাড়বে।তুমি আমার আর ইতি আপার সাথে থাকবে।তোমার জামাইরাও তো তোমার ছেলের মতোই। আমি বললাম, হ্যাঁ।তাই মনে করেছি সারাজীবন আমি আর তোমার বাবা।কিন্তু বিপদে বা শেষ সময়ে কেউ ছিলে না।অথচ ভালো কিছু খেতে গেলে মেয়েদের কথা মনে করে সবকিছু নিয়ে গেছে জামাই বাড়িতে। মেয়ে জামাই আসলে তাদের জন্য কী করবে না করবে তার জন্য অস্থির হয়ে যেত।বাজারের সব তাজা জিনিস কিনে আনতো। বলতো,ওরা শহরে সব বাসি পঁচা খায়।এখানে তাজা খাবে সবকিছু। পিঠা বানিয়ে কতবার আসতে বলি তোমাদের। তোমাদের সময় হয় না। তোমাদের বাবা এই বয়সেও টেনে টেনে নিয়ে গেছে তোমাদের কাছে।এখন আর কেউ করার নেই রে মা।এসব ভালোবাসা আর পাবে না।
আমি তোমাদের কষ্ট দিতে চাই না।তোমরা তোমাদের মতো থাকো।আমি শেষ দিন পর্যন্ত এখানেই থাকবো।আমি কিছুতেই এটা মানতে পারবো না যে আমার সন্তানেরা তার বাবার জন্য সময় করতে পারেনি।আমি তাদের সাথে কোনদিনই যাবো না।আমার বড় ছেলে বলল, তাহলে তোমাকে এখানে কে দেখবে মা? তোমাকে একা কীভাবে রেখে যাই আমরা?
পিছন থেকে আমার বড় নাতি মনির এসে বলল, আমি এখানে থেকে যাবো দাদীর সাথে। দাদীর কোথাও যেতে হবে না।এই বাড়ি ছেড়ে দাদী কোথাও থাকতে পারবে না।ভালো লাগবে না।আমার মাস্টার্স আমি এখনে চিটাগাং থেকে পড়বো।আর দাদীর সাথে বাড়িতে থাকবো।তোমাদের আপত্তি হলেও আমার এটাই সিদ্ধান্ত।
দাদার সাথে আমার কিছু কাজ করার কথা ছিল। আমি এখানে থেকে দাদার স্বপ্ন পূরণ করবো।দাদার শেষ সময় দাদা আমার হাত ধরে বলে গেছে আমি যেন তার স্বপ্ন পূরণ করি।আমি তাই করবো।তোমাদের জন্য দাদা সারাজীবন অনেক করেছেন। তার বিনিময়ে তোমরা কী করেছো? দাদার যে সম্পত্তি আছে। তার পুরোটাই দাদা কিছু দিন আগে একটা মহিলা মাদ্রাসা ও বৃদ্ধাশ্রম করার জন্য দিয়ে গেছে। সমস্ত কাজ গুছিয়ে নিয়েছিলাম।এর মাঝে দাদা চলে গেলেন।আমি এখানে সব কাজের দায়িত্ব নিয়েছি। আমার সাথে সহযোগিতা করার অনেকেই আছে। দাদা যাদের পড়ালেখা করার জন্য সহযোগিতা করেছেন। তারাও এই কাজে আমাকে সাহায্য করবে শেষ পর্যন্ত। তোমাদের কোন দায়িত্ব ছিল না।তাই কোনো অধিকার নেই বলে মনে করি।আমি ছাড়া তোমারা কেউ আসোনি যখন দাদা তোমাদেরকে তার মনের কথা বলার জন্য বহুবার ডেকেছিল। পৃথিবী থেকে যাওয়া সময়ও দাদা এত বড় ভালো কাজ করে গেলেন। যার দোয়া দাদা সবসময়ই পাবেন।তোমাদের ইচ্ছা হলে দেখে যেও।
আমার নাতি সত্যি আমাকে সেদিন সব থেকে বড় আনন্দ দিয়েছিল।আমার মনে হয়েছিল আমি আর আমার স্বামী যে দায়িত্ব পালন করেছি।তা বৃথা যায়নি।সত্যি মনির ওর বাবা মা অনেক বলার পরেও তাদের সাথে যায়নি।আমার সাথে থেকে যায়। মাঝে মাঝে যায় বাবা মা’কে দেখতে।দুই বছর লেগেছে মনিরের দাদা স্বপ্ন পূরণ করতে।আমিও মনিরের সাথে ছিলাম সব কাজে।নিজের সন্তানের চেয়ে অন্যরা বেশি সহযোগিতা করেছে।মাঝে মাঝে আমার সন্তানেরা আসে দেখে যায়।সম্পত্তি না পাওয়ার কষ্ট তাদের মাঝে আছে। কিন্তু মনিরের দাদা আগেই সবকিছু দলিল করে যাওয়ার জন্য ওরা কিছু করতে পারেনি।আর মনির এত শক্ত ছিল যে, যে কারো সাথে লড়তে রাজি ছিল ওর দাদার স্বপ্ন পূরণ করতে।
মনিরের বিয়ে হয়েছে কিছু দিন আগে।বিয়ের আগে বউকে বলে দিয়েছে সারাজীবন দাদাীর সাথেই থাকতে হবে।সে চাইলে ঢাকায় মনিরের বাবা মায়ের সাথেও থাকতে পারে।তবে মনির এখানেই মাদ্রাসা ও বৃদ্ধাশ্রম দেখাশোনার জন্য থাকবে।বউ টাও অনেক ভালো। স্বামী ছাড়া কোথাও যাবে না।সেও তার স্বামীর সাথে সব কাজ করে।অনেক দায়িত্ব পালন করছে বৃদ্ধাশ্রমের।সত্যি আজ আমি একা না।আজও আমার সাথে ভালোবাসার মানুষ আছে। আমি প্রতি দিন আমার স্বামীর কবরের কাছে গিয়ে সব কথা বলে আসি।তাকে তার স্বপ্ন পূরণের সব খবর দেই আমি।
জীবনের শেষ বয়সে সত্যি মন শরীর সব ভেঙে যায়। যাদের জন্য সারাজীবন নিজের সুখ ইচ্ছা বিসর্জন দিয়ে এতকিছু করা হয়।তারাই এক সময় ছেড়ে চলে যায়। পিছনে ফিরে দেখে না বাবা মায়ের জীবন কীভাবে কাটে? ঐ সময় বাবা মা শিশুদের মতো সন্তানের হাত ধরে থাকতে চায়।
বার্ধক্যের সময় মায়া,মমতা,ভালোবাসা, ছায়া লাগে বাবা মায়ের। ঠিক ছোট বেলায় যেমন করে সন্তানকে আগলে রাখে বাবা মা।এই বয়সে বাবা মা’কে আগলে রাখতে হয়।তাদের দোয়ায় আর ভালোবাসায় সন্তানের জীবন সুন্দর হয়।সাফল্যের মুখ দেখে বাবা মায়ের আশীর্বাদে। এই সময়টা সবার জীবনেই আসবে।তখন কারো না কারো হাত ধরে চলতে হবে।কোনো বাবা মায়ের স্থান যেন বৃদ্ধাশ্রম না হয়।সন্তানের ঘরে ভালোবাসার ছায়ায় যেন বাবা মায়ের স্থান হয়।যতদিন বাবা মায়ের হাত মাথার উপর থাকবে।ততদিন কোন বিপদই ভেঙে ফেলতে পারবে না।
(আজ প্রবীণ দিবস উপলক্ষে আমার লেখা এই গল্প থেকে এতটুকু বলতে চাই। এই সময় সবারই আসবে।বাবা মায়ের প্রতি ছেলে মেয়ে উভয়ের দায়িত্ব আছে। কারো বাবা মা যেন বৃদ্ধাশ্রমে না যায়।এই পাপ সারাজীবন পিছু নিবে।বাবা মায়ের প্রতি ছেলে ও মেয়ে দুইজনের সমান দায়িত্ব আছে। তাই শুধু ছেলে নয় মেয়েরাও যেন তার দায়িত্ব পালন করতে পারে। সেই দায়িত্ব মেয়ের ও তার স্বামীর।একটা বউ যেভাবে তার শশুর শাশুড়ির দায়িত্ব পালন করে। একজন জামাই যেন ঠিক ততটাই ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা দিয়ে তার শশুর শাশুড়ির দায়িত্ব পালন করে। আজকের এই প্রবীণ দিবস যেন বৃদ্ধাশ্রমের ঘরে তালা লাগায়।)
What i don’t understood is actually how you are not really much more well-liked than you might be now. You are very intelligent. You realize therefore significantly relating to this subject, made me personally consider it from numerous varied angles. Its like women and men aren’t fascinated unless it’s one thing to accomplish with Lady gaga! Your own stuffs nice. Always maintain it up!
You could definitely see your enthusiasm in the work you write. The world hopes for even more passionate writers like you who are not afraid to say how they believe. Always follow your heart.