বার্ধক্য

image editor output image 1863995133 1633101902510
Read Time:15 Minute, 0 Second

আমার স্বামী মারা গেছে গতকাল রাতে। আজ আমি একা নিঃসঙ্গ জীবনের ভয়ে কুঁকড়ে গেছি।মানুষটা ছাড়া কীভাবে আমি বেঁচে থাকবো তা আজ বুঝতে পারছি না। জীবনের সব সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে এতগুলো বছর ধরে চলে আসলাম।গেল তো আমাকেও নিয়ে যেত।কেন রেখে চলে গেল? আমার আর কী দেখার বাকি আছে জীবনের? চার ছেলে মেয়ে যে যার মতো চলে গেছে। আজ আমি হয়তো তাদের কাছে দায়িত্ব বা বোঝা হয়ে থাকবো।

অসুস্থ অবস্থায় কতবার সবাইকে দেখতে চেয়েছে। কেউ এলো না দেখতে।সবার কত কাজ।এত ব্যস্ত তারা।যে বাবা পৃথিবীর আলো দেখালো।মানুষের মতো করে মানুষ করলো আজ তার দাম নেই। ছোট থাকতে আঁচল ধরে রাখে।সেই সন্তান বড় হলে হাতটাও ধরে রাখতে চায় না।এই বয়সে এসে একাকীত্বের সাথে চলতে হয়।জীবন কতটা কঠিন লাগে এই বয়সে তা শুধু সময় এলেই বোঝা যায়।

আমার ছেলে মেয়েরা তার বাবার মৃত্যুর পর এসে কত কান্নাকাটি করলো। অথচ তাদের বাবা এক বুক কষ্ট নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল।শেষ সময়ে নিজের সন্তানেরা পাশে থাকলো না।থাকলো বড় নাতি মনির আর পর মানুষ। যাদের সাথে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। সেই তো এলো সবাই কেন মানুষটা বেঁচে থাকতে এলো না?যাদের জন্য সারাজীবন কষ্ট করলো তাদের কাছে থেকে সেবা তো দূরের কথা ভালোবাসা টাই পেল না।

আমার মেয়ে এসে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। বলল, মা বাবা তো চলে গেল।আমরা একা হয়ে গেলাম।আমি মেয়েকে স্বান্তনা দিয়ে বললাম, তোমার বাবা থাকলেও তোমরা কাছে আসনি।তোমাদের জীবনে এত ব্যস্ততা। তার শেষ সময়ে পাশে থাকতে পারলে না।তোমরা একা না। মানুষটা আমাকে একা করে চলে গেছে। মেয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো কতটা কষ্টে বলেছি কথা গুলো। ঘরে সবাই ছিল তারাও বুঝে নিল।

আমি সবাইকে বললাম, তোমরা তোমাদের বাবার মৃত্যুর পর এলে দায়িত্ব পালন করতে।এটারও দরকার ছিল না বাবারা।তারচেয়ে কষ্ট করে বাবা বেঁচে থাকতে এসে তাকে দেখে যেতে।সেও খুশি হয়ে পৃথিবী থেকে যেত।তোমারও দোয়া পেতে। আজ বাবা মা বোঝা। এই সময় সবার জীবনে আসবে।আমি আমার শশুর শাশুড়ির দায়িত্ব পালন করেছি।মেয়ে হয়ে যতটুকু পেরেছি বাবা মায়ের জন্য করেছি।কিন্তু আমি যে কষ্ট ভোগ করলাম তার কারণ আমি জানি না।তোমার বাবা তার দায়িত্ব পালন করতে কোনদিন অস্বীকার করেনি।কিন্তু তোমরা তার সন্তান হয়ে তাকে শুধু কষ্টই দিলে। তোমার বাবা যাওয়া সময় শুধু তোমাদেরকে দেখার জন্য আপসোস করে গেছে। তোমাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিল।

আমার সন্তানেরা আমার কাছে এসে বসে ক্ষমা চাইল।আমি বললাম,আমি ক্ষমা করার কে বাবা? তোমার বাবা তোমাদেরকে তার সমস্ত জীবন দিয়ে গেছে। তোমরা তাকে কিছু সময় দিতে পারোনি।কোনদিন আমি বা তোমার বাবা তোমাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা চাইনি বা নেইনি।তোমরা সামনে এগিয়ে গেছো। আমাদেরকে পিছনে ফিরে দেখনি।আমরাও দোয়া করেছি যাতো তোমরা ভালো থাকো।

বড় ছেলে এসে বলল, মা সত্যি আমার ভুল হয়ে গেছে। বুঝতে পারিনি বাবা এভাবে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে আমাদেরকে ছেড়ে। কাজের চাপের জন্য আসবো আসবো করে আসতে পরিনি।আমি ছেলের মাথায় হাত দিয়ে বললাম, বাবা তোমার মনে আছে? তুমি যখনই অসুস্থ হয়েছো তখনই তোমার বাবা ব্যবসা দোকান বন্ধ করে বাসায় তোমার কাছে এসে বসে থাকত। কারণ তার মনে হত তুমি কখনো বেশি অসুস্থ হলে বা কিছু লাগলে যেন সে পাশে থাকে। যাতে তোমার কষ্ট না হয়।তুমি যতবার ঢাকায় অসুস্থ হয়েছো তোমার বাবা তোমাকে গিয়ে নিয়ে এসেছে। তোমাকে কষ্টে কখনো একা রাখেনি।সেই বাবা তার শেষ সময়ে পাশে পায়নি তোমাকে।

মেঝো ছেলে এসে বলল, মা বাবা তো নেই। তুমি এখন আমাদের সাথে থাকবে।বাবা একা চলে গেল।তুমি একা এখানে থাকবে না।আমি তোমাকে নিয়ে যাবো সাথে করে। আমি বললাম, না রে বাবা।আমি এখানেই থাকবো।তোমার বাবা যে মাটিতে শুয়ে আছে। আমি ঐ জায়গা ছাড়া কোথাও যাবো না।প্রতি দিন তাকে কাছে থেকে দেখবো।আর তোমাদেরকে দায়িত্বের বোঝা দিতে চাই না বাবা।তোমার জন্য তোমার বাবার চাকরি চলে গিয়েছিল।তুমি ছোট থেকে খুব রোগা ছিলে।অসুখ লেগেই থাকতো।তোমার বাবা একবার ছুটি না-পেয়ে অফিস থেকে বাড়িতে চলে আসে।অফিসে কিছু না জানিয়ে। তার অনেক ভালো বেতনের চাকরিটা চলে যায়। আমাদেরকে দেখার কেউ ছিল না। তোমার বাবা চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করলো।যাতে পাশে থাকতে পারে সবসময়ই। শিক্ষিত একজন মানুষ যার কিনা সারাজীবন চাকরি করার শখ ছিল। সে ব্যবসা করলো সারাজীবন। তোমার দাদা দাদীর জন্য আমরা গ্রামের বাড়িতে থেকে গেলাম।সেই বাবার জন্য তুমি ছুটি পাওনি বাবা।তোমার সংসারে তুমি সুখী হও বাবা।তোমার বাবা তার দায়িত্ব পালন করেছে।কোনো অভিযোগ করেনি সে।

মেয়ে দুটো এসে জড়িয়ে ধরে বলল, মা এসব বললে এখন কষ্ট আরও বাড়বে।তুমি আমার আর ইতি আপার সাথে থাকবে।তোমার জামাইরাও তো তোমার ছেলের মতোই। আমি বললাম, হ্যাঁ।তাই মনে করেছি সারাজীবন আমি আর তোমার বাবা।কিন্তু বিপদে বা শেষ সময়ে কেউ ছিলে না।অথচ ভালো কিছু খেতে গেলে মেয়েদের কথা মনে করে সবকিছু নিয়ে গেছে জামাই বাড়িতে। মেয়ে জামাই আসলে তাদের জন্য কী করবে না করবে তার জন্য অস্থির হয়ে যেত।বাজারের সব তাজা জিনিস কিনে আনতো। বলতো,ওরা শহরে সব বাসি পঁচা খায়।এখানে তাজা খাবে সবকিছু। পিঠা বানিয়ে কতবার আসতে বলি তোমাদের। তোমাদের সময় হয় না। তোমাদের বাবা এই বয়সেও টেনে টেনে নিয়ে গেছে তোমাদের কাছে।এখন আর কেউ করার নেই রে মা।এসব ভালোবাসা আর পাবে না।

আমি তোমাদের কষ্ট দিতে চাই না।তোমরা তোমাদের মতো থাকো।আমি শেষ দিন পর্যন্ত এখানেই থাকবো।আমি কিছুতেই এটা মানতে পারবো না যে আমার সন্তানেরা তার বাবার জন্য সময় করতে পারেনি।আমি তাদের সাথে কোনদিনই যাবো না।আমার বড় ছেলে বলল, তাহলে তোমাকে এখানে কে দেখবে মা? তোমাকে একা কীভাবে রেখে যাই আমরা?

পিছন থেকে আমার বড় নাতি মনির এসে বলল, আমি এখানে থেকে যাবো দাদীর সাথে। দাদীর কোথাও যেতে হবে না।এই বাড়ি ছেড়ে দাদী কোথাও থাকতে পারবে না।ভালো লাগবে না।আমার মাস্টার্স আমি এখনে চিটাগাং থেকে পড়বো।আর দাদীর সাথে বাড়িতে থাকবো।তোমাদের আপত্তি হলেও আমার এটাই সিদ্ধান্ত।

দাদার সাথে আমার কিছু কাজ করার কথা ছিল। আমি এখানে থেকে দাদার স্বপ্ন পূরণ করবো।দাদার শেষ সময় দাদা আমার হাত ধরে বলে গেছে আমি যেন তার স্বপ্ন পূরণ করি।আমি তাই করবো।তোমাদের জন্য দাদা সারাজীবন অনেক করেছেন। তার বিনিময়ে তোমরা কী করেছো? দাদার যে সম্পত্তি আছে। তার পুরোটাই দাদা কিছু দিন আগে একটা মহিলা মাদ্রাসা ও বৃদ্ধাশ্রম করার জন্য দিয়ে গেছে। সমস্ত কাজ গুছিয়ে নিয়েছিলাম।এর মাঝে দাদা চলে গেলেন।আমি এখানে সব কাজের দায়িত্ব নিয়েছি। আমার সাথে সহযোগিতা করার অনেকেই আছে। দাদা যাদের পড়ালেখা করার জন্য সহযোগিতা করেছেন। তারাও এই কাজে আমাকে সাহায্য করবে শেষ পর্যন্ত। তোমাদের কোন দায়িত্ব ছিল না।তাই কোনো অধিকার নেই বলে মনে করি।আমি ছাড়া তোমারা কেউ আসোনি যখন দাদা তোমাদেরকে তার মনের কথা বলার জন্য বহুবার ডেকেছিল। পৃথিবী থেকে যাওয়া সময়ও দাদা এত বড় ভালো কাজ করে গেলেন। যার দোয়া দাদা সবসময়ই পাবেন।তোমাদের ইচ্ছা হলে দেখে যেও।

আমার নাতি সত্যি আমাকে সেদিন সব থেকে বড় আনন্দ দিয়েছিল।আমার মনে হয়েছিল আমি আর আমার স্বামী যে দায়িত্ব পালন করেছি।তা বৃথা যায়নি।সত্যি মনির ওর বাবা মা অনেক বলার পরেও তাদের সাথে যায়নি।আমার সাথে থেকে যায়। মাঝে মাঝে যায় বাবা মা’কে দেখতে।দুই বছর লেগেছে মনিরের দাদা স্বপ্ন পূরণ করতে।আমিও মনিরের সাথে ছিলাম সব কাজে।নিজের সন্তানের চেয়ে অন্যরা বেশি সহযোগিতা করেছে।মাঝে মাঝে আমার সন্তানেরা আসে দেখে যায়।সম্পত্তি না পাওয়ার কষ্ট তাদের মাঝে আছে। কিন্তু মনিরের দাদা আগেই সবকিছু দলিল করে যাওয়ার জন্য ওরা কিছু করতে পারেনি।আর মনির এত শক্ত ছিল যে, যে কারো সাথে লড়তে রাজি ছিল ওর দাদার স্বপ্ন পূরণ করতে।

মনিরের বিয়ে হয়েছে কিছু দিন আগে।বিয়ের আগে বউকে বলে দিয়েছে সারাজীবন দাদাীর সাথেই থাকতে হবে।সে চাইলে ঢাকায় মনিরের বাবা মায়ের সাথেও থাকতে পারে।তবে মনির এখানেই মাদ্রাসা ও বৃদ্ধাশ্রম দেখাশোনার জন্য থাকবে।বউ টাও অনেক ভালো। স্বামী ছাড়া কোথাও যাবে না।সেও তার স্বামীর সাথে সব কাজ করে।অনেক দায়িত্ব পালন করছে বৃদ্ধাশ্রমের।সত্যি আজ আমি একা না।আজও আমার সাথে ভালোবাসার মানুষ আছে। আমি প্রতি দিন আমার স্বামীর কবরের কাছে গিয়ে সব কথা বলে আসি।তাকে তার স্বপ্ন পূরণের সব খবর দেই আমি।

জীবনের শেষ বয়সে সত্যি মন শরীর সব ভেঙে যায়। যাদের জন্য সারাজীবন নিজের সুখ ইচ্ছা বিসর্জন দিয়ে এতকিছু করা হয়।তারাই এক সময় ছেড়ে চলে যায়। পিছনে ফিরে দেখে না বাবা মায়ের জীবন কীভাবে কাটে? ঐ সময় বাবা মা শিশুদের মতো সন্তানের হাত ধরে থাকতে চায়।

বার্ধক্যের সময় মায়া,মমতা,ভালোবাসা, ছায়া লাগে বাবা মায়ের। ঠিক ছোট বেলায় যেমন করে সন্তানকে আগলে রাখে বাবা মা।এই বয়সে বাবা মা’কে আগলে রাখতে হয়।তাদের দোয়ায় আর ভালোবাসায় সন্তানের জীবন সুন্দর হয়।সাফল্যের মুখ দেখে বাবা মায়ের আশীর্বাদে। এই সময়টা সবার জীবনেই আসবে।তখন কারো না কারো হাত ধরে চলতে হবে।কোনো বাবা মায়ের স্থান যেন বৃদ্ধাশ্রম না হয়।সন্তানের ঘরে ভালোবাসার ছায়ায় যেন বাবা মায়ের স্থান হয়।যতদিন বাবা মায়ের হাত মাথার উপর থাকবে।ততদিন কোন বিপদই ভেঙে ফেলতে পারবে না।

(আজ প্রবীণ দিবস উপলক্ষে আমার লেখা এই গল্প থেকে এতটুকু বলতে চাই। এই সময় সবারই আসবে।বাবা মায়ের প্রতি ছেলে মেয়ে উভয়ের দায়িত্ব আছে। কারো বাবা মা যেন বৃদ্ধাশ্রমে না যায়।এই পাপ সারাজীবন পিছু নিবে।বাবা মায়ের প্রতি ছেলে ও মেয়ে দুইজনের সমান দায়িত্ব আছে। তাই শুধু ছেলে নয় মেয়েরাও যেন তার দায়িত্ব পালন করতে পারে। সেই দায়িত্ব মেয়ের ও তার স্বামীর।একটা বউ যেভাবে তার শশুর শাশুড়ির দায়িত্ব পালন করে। একজন জামাই যেন ঠিক ততটাই ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা দিয়ে তার শশুর শাশুড়ির দায়িত্ব পালন করে। আজকের এই প্রবীণ দিবস যেন বৃদ্ধাশ্রমের ঘরে তালা লাগায়।)

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

42 thoughts on “বার্ধক্য

  1. What i don’t understood is actually how you are not really much more well-liked than you might be now. You are very intelligent. You realize therefore significantly relating to this subject, made me personally consider it from numerous varied angles. Its like women and men aren’t fascinated unless it’s one thing to accomplish with Lady gaga! Your own stuffs nice. Always maintain it up!

  2. I have been browsing on-line more than 3 hours lately, but I by no means found any interesting article like yours. It’s pretty worth enough for me. Personally, if all site owners and bloggers made good content as you did, the internet can be much more useful than ever before.

  3. Java Burn: What is it? Java Burn is marketed as a natural weight loss product that can increase the speed and efficiency of a person’s natural metabolism, thereby supporting their weight loss efforts

  4. An interesting discussion is worth comment. I think that you should write more on this topic, it might not be a taboo subject but generally people are not enough to speak on such topics. To the next. Cheers

  5. Hiya, I am really glad I have found this information. Today bloggers publish only about gossips and net and this is really frustrating. A good site with exciting content, this is what I need. Thanks for keeping this web site, I will be visiting it. Do you do newsletters? Can not find it.

  6. Excellent post. I was checking constantly this weblog and I’m impressed! Extremely helpful info specifically the ultimate phase 🙂 I care for such information a lot. I was seeking this particular info for a long time. Thanks and best of luck.

  7. I’d have to examine with you here. Which is not one thing I usually do! I take pleasure in reading a post that may make folks think. Additionally, thanks for permitting me to comment!

  8. Write more, thats all I have to say. Literally, it seems as though you relied on the video to make your point. You clearly know what youre talking about, why waste your intelligence on just posting videos to your weblog when you could be giving us something enlightening to read?

  9. Great blog here! Also your website loads up very fast! What host are you using? Can I get your affiliate link to your host? I wish my web site loaded up as fast as yours lol

  10. Pretty great post. I just stumbled upon your weblog and wished to mention that I have truly loved browsing your weblog posts. After all I will be subscribing in your feed and I am hoping you write once more very soon!

  11. I’ve learn some excellent stuff here. Definitely worth bookmarking for revisiting. I wonder how so much attempt you place to create this type of wonderful informative site.

  12. What i don’t realize is in reality how you’re now not really a lot more neatly-appreciated than you may be right now. You’re so intelligent. You understand therefore considerably in terms of this subject, produced me for my part consider it from a lot of numerous angles. Its like women and men don’t seem to be involved until it’s one thing to accomplish with Woman gaga! Your personal stuffs nice. At all times deal with it up!

  13. Just wanna remark on few general things, The website design and style is perfect, the content is very excellent. “To imagine is everything, to know is nothing at all.” by Anatole France.

  14. Hi! I’m at work browsing your blog from my new iphone 3gs! Just wanted to say I love reading through your blog and look forward to all your posts! Keep up the great work!

  15. Definitely imagine that that you said. Your favorite reason seemed to be at the web the simplest factor to take note of. I say to you, I definitely get irked whilst other folks think about worries that they just don’t realize about. You controlled to hit the nail upon the highest and also defined out the whole thing without having side-effects , other folks could take a signal. Will likely be again to get more. Thank you

  16. What Is FitSpresso? The effective weight management formula FitSpresso is designed to inherently support weight loss. It is made using a synergistic blend of ingredients chosen especially for their metabolism-boosting and fat-burning features.

  17. Whats Taking place i’m new to this, I stumbled upon this I’ve found It positively helpful and it has helped me out loads. I hope to give a contribution & aid other customers like its helped me. Good job.

  18. Good post. I study one thing more challenging on different blogs everyday. It’s going to all the time be stimulating to read content from different writers and follow a bit of something from their store. I’d desire to use some with the content on my weblog whether you don’t mind. Natually I’ll give you a hyperlink in your web blog. Thanks for sharing.

  19. It’s a shame you don’t have a donate button! I’d certainly donate to this excellent blog! I suppose for now i’ll settle for book-marking and adding your RSS feed to my Google account. I look forward to fresh updates and will share this site with my Facebook group. Talk soon!

  20. Hi there! This is my 1st comment here so I just wanted to give a quick shout out and tell you I truly enjoy reading through your posts. Can you recommend any other blogs/websites/forums that cover the same topics? Many thanks!

  21. An impressive share, I just given this onto a colleague who was doing a little analysis on this. And he in fact bought me breakfast because I found it for him.. smile. So let me reword that: Thnx for the treat! But yeah Thnkx for spending the time to discuss this, I feel strongly about it and love reading more on this topic. If possible, as you become expertise, would you mind updating your blog with more details? It is highly helpful for me. Big thumb up for this blog post!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social profiles