ছোট গল্প-ঃ স্বপ্ন ঝরা জীবন

IMG 20211008 023954
Read Time:10 Minute, 30 Second

কামাল হোসেন একজন ছোটখাটো ব্যবসায়ী মানুষ। তার দুই ছেলে মামুন আর মুবিন।ছেলেদের নিয়ে কালাম হোসেন ও তার স্ত্রী আয়শার স্বপ্ন হলো ছেলে দুটো লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে।ছেলেদেরকে ছোট বেলা থেকেই কোরাআন শিক্ষা ও নামাজ কালাম শিখিয়েছেন।কামাল হোসেন অনেক স্বপ্ন নিয়ে ছেলে মামুনকে ঢাকায় পাঠায় এইচএসসি পাশ করার পর।অনেক ভালো ছাত্র বলে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় মামুন।

মায়ের কলিজার টুকরো সন্তান দূরে বলে মায়ের চোখে ঘুম নাই। স্বপ্ন বড় তাই কিছু ছাড় তো দিতেই হবে।ছোট ছেলে মুবিন তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। ইচ্ছা আছে মুবিনও এইচএসসি পাশ করলে তাকেও ঢাকায় পাঠাবে। মায়ের কথা মতো মামুন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে।খারাপ সবকিছু থেকে দূরে থাকে।ছোট বেলা থেকে শুধু পড়ালেখা নিয়ে বড় হওয়া মামুনের জগৎ তার পড়ালেখা। বাবা মায়ের সব স্বপ্ন পূরণ করাই তার জীবনের মূল লক্ষ্য। কিন্তু মামুন সত্য ও ন্যায কথা বলতে কাউকেই ছাড়ে না।দেশের প্রতি তরা অগাধ ভালোবাসা। একজন শিক্ষিত ও সচেতন নাগরিকের তো তাই হওয়ার কথা। সবার আগে দেশের ভালো চাইবে এটাই স্বাভাবিক বিষয়। সবাই তো অন্যায় মেনে নিতে জানে না।

মামুন বেশ ভালোই লেখাপড়া করছে।অন্য কিছুই তাকে টানে না পড়ালেখা ছাড়া। যেখানে বুয়েট ক্যাম্পাসের অনেকেই রাজনীতি করে।অনেকেই অপরাধ মূলক কাজের সাথে জড়িয়ে গেছে।সেখানে মামুন তার নিজের জগতে ব্যস্ত থাকে।মাঝে মাঝে তার দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে দুই একটা কথা ফেসবুকে লিখে। নামাজের সময় হলে বন্ধুদের নামাজ পড়ার অনুরোধ করে। সে যে পরিবার থেকে এসেছে সেখানে তাকে শুধু শিক্ষিতই না সুশিক্ষিত করে তুলেছে তার বাবা মা।

মুবিন বড় ভাইয়ের কাছে তার ক্যাম্পাসের গল্প শুনে স্বপ্ন দেখে ভাইয়ের মতো সেও ঢাকায় যাবে পড়ালেখা করতে সেও বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবে।শহরের লাল নীল স্বপ্ন তাকেও যে টানে।বন্ধুদের সাথে ভাইয়ের বলা গল্প গুলো বলে আর গর্ব বোধ করে মুবিন।তার ভাই এতটাই মেধাবী আর ভালো যে মুবিন কেন যে কেউ গর্ব করবে।

কিন্তু মামুনের কাছে যা স্বাভাবিক মনে হয়েছে তা অনেকের কাছেই অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। যারা রাজনীতি করে এখনকার সময়ে তারা এক সময় অন্ধকার জগতে ডুবে যায়। নানান ধরনের মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে যায়।বা নিজেই মাদকাসক্ত হয়ে যায়। এত মেধাবী ছাত্র গুলো অকালে ঝরে যায় ক্ষমতার পায়ের নিচে।

মামুনকে কিছু সিনিয়র ছাত্র টার্গেট করে। তাদের কাছে মামুমের স্বাভাবিক আচরণ অস্বাভাবিক মনে হতে থাকে।তারা মামুনকে শিবির ভাবতে থাকে।তাকে সন্দেহ করতে থাকে।মামুনকে তার জিজ্ঞেস করলে মামুন তাদেরকে জানায় সে এসবের মধ্যে সে নেই। কিন্তু মাদকাসক্ত ছাত্ররা মামুনের কথা বিশ্বাস করে না।তাদের চিন্তা ক্ষমতা তো কবেই মরে গেছে। মানবতার বোধ যাদের মনে নেই তারা মানুষের পর্যায়ে থাকে না।

মামুন একদিন দেখে কিছু সিনিয়র ছাত্র মামুনের এক রুমমেট বাদলকে বাজে ভাষায় গালি দিচ্ছে। মামুন সামনে যায় আর বিষয়টা জানতে চায়।এতে রেগে যায় ছেলেগুলো। তারা মামুনকে চলে যেতে বলে।এসব বিষয়ে নাকগলাতে নিষেধ করে। কিন্তু ছেলেগুলো এক পর্যায়ে বাদলকে মারতে থাকে।তখন মামুন সহ্য করতে না পেরে সামনে গিয়ে বাদলকে বাঁচাতে চায়।মামুন চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে থাকে।তখন ওরা বাদলকে রেখে চলে যায়।কিন্তু মামুনকে দেখে নিবে বলে যায়।পরে মামুন বাদলের কাছে জানতে পারে ছাত্র গুলো বাদলকে দিয়ে বাজে কাজ করাতে চায়।বাদল রাজি হয়নি বলে মরাতে আসে।

একরাতে মামুনকে তারা ডেকে নেয় আর শারিরীক অত্যাচার শুরু করে। তারা এতটাই মাদকাসক্ত ছিল যে তাদের কোন হিতাহিত জ্ঞান ছিল না।মামুন বারবার তাদের কাছে জীবন ভিক্ষা চায়।কিন্তু তাদের
কান পর্যন্ত মামুনের আর্তনাদ পৌছায় না।তারা জানোয়ারের মতো মারতে থাকে মামুনকে।এক সময় তারা বুঝতে পারে মামুন আর বেঁচে নেই। তারা তাকে রুমের বাহিরে রেখে যায়।মামুনের দেহ পড়ে থাকে মেঝেতে নিষ্প্রাণ হয়ে।

খবর পেয়ে ছুটে আসে মামুনের পরিবার। এসে তারা তাদের মামুনকে লাশ হিসাবে পায়।সন্তানকে এভাবে দেখা কতটা কষ্টের তা হয়তো ঐ পরিবার ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবে না। ছেলেকে এভাবে দেখে মামুনের বাবা মা জ্ঞান হারায় বারবার। কী অপরাধ ছিল তাদের ছেলের? এটাই প্রশ্ন তাদের।

হলের সিসি ক্যামেরায় সব ধরা পড়ে। আসামীদের মধ্যে অনেকেই ধরা হয়।কিন্তু অনেকেই পালাতক এখনো। অনেকেই ক্ষমতার দাপটে নির্দোষ প্রমাণিত হয়।কথায় বলে ক্ষমতা যার সকল অপরাধের উর্ধ্বে সে।আজ দুই বছর মামুনের পরিবার মামুনের খুনিদের শাস্তি চেয়ে চেয়ে ক্লান্ত। তাদের তো সব হারিয়ে গেল। মামুন তো আর ফিরবে না।তারা মনে করে সন্তানের খুনিদের শাস্তি দেখলে মামুনের আত্না শান্তি পাবে।তাই আজও আশায় আছে আইনের শাসন একদিন সঠিক পথে ফিরবে।মামুনের খুনিদের শাস্তি হবে।আজও মামুনের বন্ধুরা চায় খুনিদের বিচার হোক।শিক্ষা অঙ্গন রাজনীতি মুক্ত হোক।

আজ ভাবতে কষ্ট হয় এই সেই ছাত্ররা যারা ভাষা আন্দলোনে ছিল। যারা মুক্তি যুদ্ধের সাথে ছিল।যারা দেশ স্বাধীন করেছে।আজ সেই ছাত্ররা মাদকাসক্ত হয়ে মানুষ খুন করছে।বাবা মায়ের কোল খালি করছে কিছু না ভেবেই। এই সেই ছাত্র রাজনীতি কী?

যেখানে বাবা মা সন্তানকে বড় বড় স্বপ্ন নিয়ে শহরে পাঠায় সুশিক্ষিত হতে।সেখান থেকে যদি লাশ হয়ে বাবার ভাইয়ের কাঁধে কবরে যায়।সেই জায়গায় কোনো বাবা মা কোন ভরসায় বা আশায় সন্তানকে পাঠাবে? সন্তান বড় বড় ডিগ্রি না নিয়ে বেঁচে থাকুক এটাই হয়তো চাইবে কিছু দিন পর। বাবা সন্তানকে স্বপ্ন দেখাবে না।বলবে শুধু বেঁচে থাক বাবা।

বাবা মা সন্তানের জন্য এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার ইচ্ছা রাখে। তাদের সকল স্বপ্ন সন্তানের মাঝে রোপণ করে। সমস্ত অর্জন বিলিয়ে দেয় সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য। সেই সন্তান যদি এভাবে অবেলায় চলে যায় তাহলে কী নিয়ে বাঁচবে তারা? বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ কতটা বোঝার তা এক বাবাই জানেন।বুক থেকে সন্তান হারানোর কষ্ট কখনো কমে না।

ছাত্রদেরকে নোংরা রাজনীতির সাথে জড়িত করে কিছু রাজনৈতিক নেতারা তাদের স্বার্থ হাসিল করছে।মেধাবী ছাত্রদের ধ্বংস করছে।তাদের কী ভয় হয় এরাই একদিন দেশের ভবিষ্যৎ হবে? কিসের ভয় রাজনৈতিক নেতাদের এই ছাত্র সমাজকে নিয়ে? কেন ছাত্রদের এভাবে মিথ্যা ক্ষমতার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সুন্দর জীবন ধ্বংস করছে? কেন এমন ছাত্রদের খুনের বিচার করে অন্যায়ের জবাব দেয় না? এক সাথে ঝরে গেল কতগুলো জীবন। মামুন তো চলে গেলই।সাথে নষ্ট হলো মেধাবী ছাত্র গুলো নষ্ট রাজনীতির সাথে জড়িয়ে খুনি হয়ে।এই ক্ষতি কী শুধু পরিবারের? এই ক্ষতি সমস্ত দেশ ও জাতির। এটা একটা ক্ষয় রোগ।এর প্রতিরোধ করা উচিত। নয়তো সমস্ত ছাত্র সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

111 thoughts on “ছোট গল্প-ঃ স্বপ্ন ঝরা জীবন

  1. I’m still learning from you, as I’m making my way to the top as well. I absolutely liked reading everything that is posted on your blog.Keep the posts coming. I loved it!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social profiles