ভালোবাসার ছাঁদ

image editor output image55929786 1638131878949
Read Time:20 Minute, 44 Second

রিতা মামার কাছে বড় হয়েছে। রিতার বাবার মৃত্যু হয় ক্যান্সারে।রিতা তখন এসএসসি পাস করেছে।মা মারা যায় তার দুই বছর পর। বাবার মৃত্যুর পর রিতার মা অসুস্থ হয়ে যান। হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করেন।রিতার আর কোনো ভাই বোন নাই। রিতার মা অসুস্থ অবস্থায় তার একমাত্র ভাই মামুনকে তার পরিবার সহ এই বাড়িতে থাকতে বলেন।বোনের কঠিন সময় ভাই হয়ে দূরে থাকতে পারেননি।চলে আসেন বোনের কাছে।

ঢাকায় এসে মামুন রিতার বাবার বন্ধুর অফিসে চাকরি নেয়।রিতার মা সেই ব্যবস্থা করে দেন।রিতার মা মৃত্যুর সময় রিতার দায়িত্ব মামুনের হাতে দিয়ে যায়।আর বলে যায় মামুন যেন তার ছেলে মেয়ের মতোই রিতাকে দেখে।মামুনও কথা দেয় বোনকে।এই সাত বছর দায়িত্ব সহ কারে সে রিতার দায়িত্ব পালন করেছে।নিজের মেয়ের মতোই রিতাকে ভালোবাসে।রিতার চেহারা একদম রিতার মায়ের মতো।মামুনের তাই আরও বেশি মায়া লাগে।

রিতার মামী হাজেরা একটু রাগী।সে বেশ কঠিন। তবে রিতার মামা খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছে তাকে।কোনদিন যেন রিতাকে কোনো কষ্ট দিয়ে কথা না বলে।কিছু বলতে হলে তা যেন তাকে বলে।হাজেরা তা মনে রেখেছে। কারণ মামুন বলেছে, রিতা তাদের সাথে ভালো না থাকলে মামুন এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে সবাইকে নিয়ে। রিতা এখন একাই থাকতে পারবে।হাজেরা জানে ঢাকা শহরে বাসা ভাড়া দিয়ে থাকা খুব কষ্টের।দুই বাচ্চার পড়ালেখার খরচ দিতে গিয়ে হয়রান মামুন। তাই রিতাকে নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না।যতটুকু পারে রিতার জন্য করে। আর রিতা অসম্ভব ভদ্র মেয়ে। যতটুকু পারে হাজেরাকে সাহায্য করে সব কাজে।কখনো কোনো প্রশ্ন করে না। নিজের মতো থাকে।তাছাড়া মামাতো ছোট দুই ভাই বোনকে অসম্ভব ভালোবাসে রিতা।তারও অসম্ভব ভালোবাসে রিতাকে।তবুও রিতার মনে কষ্ট। নিজের বাবা মায়ের অভাব তো থাকবেই মনে।

বাবার কোলে মাথা রেখে গল্প করা।মায়ের হাতে ভাত খাওয়া। বাবার কাছে যখন চা চাইত তাই পেত। রিতার কখনো জ্বর আসলে বাবা সারারাত বসো থাকতো পাশে।বাবা মায়ের জীবন ছিল রিতা।অথচ দুইজনই চলে গেলেন রিতকে ছেড়ে। রিতা রাতের আকাশে তারাদের মাঝে বাবা মা’কে খুঁজে। তারা কী ভুলে গেছে তাকে? কেমন করে চলে গেল?মা’কে জড়িয়ে ধরতে খুব ইচ্ছা করে রিতার।বাবার হাতটা শক্ত করে ধরে বলতে ইচ্ছা করে আবারও ফিরে আসো বাবা।প্রতি রাতে বাবা মায়ের কথা মনে করে কাঁদে রিতা।মাঝে মাঝে রিতা মায়ের ডাক শুনতে পায় যেন।মা দূর থেকে ডাকছে যেন।রিতাকে সবাই ভালোবাসে।কিন্তু বাবা মায়ের ভালোবাসা সে তো আলাদা।

রিতার মাস্টার্স শেষ হয়েছে। প্রাইভেট একটা ব্যাংকে চাকরি হয়েছে। বেতন যা পায় তার অর্ধেক রেখে। বাকিটা মামার হাতে দেয়।মামা অবশ্য নিতে চায়নি। কিন্তু রিতা কান্না করাতে নিতে হয়েছে।এতে হাজেরা খুব খুশি হয়।রিতার মামা এই টাকা খরচ করেনি।সম্পূর্ণ টাকা রিতার বিয়ের জন্য জমা রেখেছে। কিন্তু হাজেরা এই টাকা সংসারে খরচের জন্য চেয়েছিল।মামুন তা দেয়নি।রিতার বিয়ের দায়িত্ব তার এখন।সেটা সে ভালো ভাবেই পালন করতে চায়।

একদিন রিতার বাবার বন্ধু মানে মামুনের বস ডেকে বলেন, রিতার জন্য খুব ভালো একটা ছেলে পাওয়া গেছে। কথা বলে দেখা যায়। খুব ভালো তারা। তারা শুধু মেয়ে শিক্ষিত আর ভালো চায়।আর কিছু না।রিতা তো খুব ভালো মেয়ে। মামুনের বস হামিদ চৌধুরী ছেলের বায়োডাটা দিল মামুনকে।সব দেখে মামুনের খুব পছন্দ হয়েছে। তবুও কথা আগানোর আগে ছেলের পরিবারের সাথে কথা বলতে চায়।আর রিতার বায়োডাটাও দিল হামিদ চৌধুরীকে।হামিদ চৌধুরী মেইল করে পাঠিয়ে দিলেন রিতার বায়োডাটা ছেলের কাছে।

দুই দিন পর হামিদ চৌধুরী মামুনকে বললেন, আজ বিকালে ছেলের মা আর ছেলে এই অফিসে আসবে।ছেলের বাবা হামিদ চৌধুরীর দূরসম্পর্কের আত্নীয়। ছেলের বাবা এক বছর হয় মারা গেছেন।একমাত্র ছেলের বিয়ে দিয়ে চিন্তা মুক্ত হতে চান তারেকের মা। মামুন সবকিছু খুলে বলেন তাদেরকে। তাদের কোনো আপত্তি নেই। ছবি দেখে মেয়ে মোটামুটি পছন্দ হয়েছে তাদের। এখন সামনাসামনি দেখে আংটি পারবেন।মামুন এখনো কিছু বলেনি রিতাকে।সবকিছু ঠিক মতো জেনে তারপর জানাবে ভেবেছিলেন।দুই একদিনের মধ্যে জানাবেন বলে সময় নিলেন মামুন।

বাড়িতে গিয়ে সবার আগে রিতার সাথে একা কথা বললেন মামুন।রিতার চোখ ভিজে গেল। সবাইকে ছেড়ে যেতে পারবে তো?রিতার কষ্ট বুঝতে পারছেন তার মামা।কিন্তু তার তো একদিন চলে যেতেই হবে।এটা অনেক বড় দায়িত্ব মামুনের মাথায়।মামুন রিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন, মা রে মেয়ে হয়ে জন্ম নিলে শশুর বাড়ি তো যেতেই হবে।তোমার একটা ভালো বিয়ে দিতে পারলে তোমার মায়ের কাছে দেওয়া কথা রাখা হবে আমার। অনেক ভালো তারা।তোমাকে ভালো রাখবে।আমি আশেপাশে থেকে সব খবর নিয়েছি তাদের। আমি তাদের আগামী শুক্রবার আসতে বলি?রিতা মামার হাত ধরে বলল,আমাকে ভুলে যাবে না তো মামা?রিতার এই কথায় মামুনের বুকটা হুহু করে উঠলো।সে নিজেও জানে না।কখন তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়েছে।

মামুনের চোখ মুছে দিয়ে রিতা বলল,জানি তোমার অনেক কষ্ট হবে আমাকে বিদায় দিতে।আমার একটা আবদার ছিল তোমার কাছে। মামুন বলে,বলো মা।রিতা মামার হাত ধরে বলে,এই বাড়ির দলিলটা যদি দেও আমাকে।মামা হেসে বলল,এটা তোমার বাড়ি।অবশ্যই দিব।আমিই দিতাম তোমাকে।রিতা অনুরোধ করলো এটা যেন অন্য কেউ না জানে।মামুন কথা দিল কেউ জানবে না এ কথা। মামুন রিতাকে সব কাগজ এনে দিলেন।

রিতাকে এসে দেখে গেলেন তারেকের মা, তারেক আর কয়েকজন আত্মীয়স্বজন মিলে।হামিদ চৌধুরীও এসেছিলেন।তাদের খুব পছন্দ হয়েছে রিতাকে।আর মামুন যা বলে সেটাই রিতার সিদ্ধান্ত। ওনারা আংটি পরিয়ে দিলেন।আর মাত্র বিশ দিন পর বিয়ের তারিখ ঠিক করলেন। যাওয়ার সময় তারেক তার কার্ড দিয়ে গেল।রিতার নম্বর টাও নিয়ে গেল।

রাতে তারেক কল করে রিতাকে।কেমন আছে জানতে চায়।রিতা জানায় ভালো আছে। রিতাও জিজ্ঞেস করে কেমন আছে তারেক।তারেক রিতাকে বলে,আমি কিছু কথা বলতে চাই। এই কথার উত্তরে রিতাও বলে আমারও কিছু বলার আছে। যদি সময় দিতেন।তাহলে সামনাসামনি বসে বলতাম।আপনার কথা বলতে পারেন।তারেক বলল,তাহলে কাল তো ছুটি।বিকালে দেখা করি আমরা। সামনাসামনি কথা হোক দুজনের। কেমন হয়? রিতা রাজি হলো।

আজ রিতা হালকা গোলাপি রঙের একটা সুন্দর শাড়ি পরে এসেছে। চমৎকার লাগছে তাকে।যেন গোলাপি রঙের গোলাপ। দূর থেকে তারেক দেখছিল রিতাকে। তারেক মুগ্ধ রিতার সৌন্দর্যে।রিতা তারেকের সামনে বসা।কিন্তু তারেকের মনে হচ্ছে রিতা অনেক দূরে। হঠাৎ করেই একটা টান অনুভব করছে তারেক।তারেক রিতাকে জিজ্ঞেস করে খাবার অডার করলো।তারেক রিতাকে বলল,বলেন কী বলতে চান।

রিতা খুব সহজ ভাবে বলতে শুরু করে।রিতা বলল, আমার বাবার মৃত্যুর পর মা অসুস্থ হয়ে যায়। তখন মামা দেশের বাড়ি থেকে ঢাকায় চলে আসেন আমাদের কাছে। কারণ তখন আমাদেরকে সামলে রাখার মতো কেউ ছিল না। মায়ের মৃত্যুর পর আমার আপনজন বলতে মামা আর তার পরিবার। মামী আমার জন্য যথেষ্ট করেছেন।আমার সব দায়িত্ব ওনারা পালন করেছেন।আমার মামাতো ভাই বোন দুটো অসম্ভব ভালোবাসে আমাকে।ওরা ঠিক আমার আপন ভাই বোন।আমার জগতে ওরা ছাড়া কেউ নেই। আসল কথা হলো।যে বাড়িতে আমরা থাকি।ওটা আমার বাবার বাড়ি। বাবা মৃত্যুর আগে মায়ের নামে লিখে দেন।মা অসুস্থ অবস্থায় আমার নামে দিয়ে যান।আমি এই বাড়ি মামার নামে লিখে দিতে চাই। আজ মামা পাশে না থাকলে আমার পক্ষে একা বেঁচে থাকা অনেক কঠিন হতো।এত সুন্দর জীবন আমার হতো না।আমি আজ যেখানে পৌঁছাতে পেরেছি। তা শুধু মামা আর মামীর জন্য। আমি তাদের মাথার উপর থেকে ছাঁদ কেড়ে নিতে পারবো না।যারা আমার মতো এতিন মেয়ের জন্য সারাজীবন ছাঁদ হয়ে থেকেছেন।এই ছোট্ট বাড়িটা আমার মামার হয়েই থাকবে।

রিতা আরও বলে,আপনার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে। আপনাকে জানানো উচিত মনে করেছি।আপনার আপত্তি থাকলে আমার পক্ষে এই বিয়ে করা সম্ভব না।কারণ আমি এই বাড়ি মামাকেই দিয়ে যাবো।সারাজীবন আমার কাছে তারা বাবা মায়ের মতো সম্মানের স্থানে থাকবেন।তাদের সাথে আমার সম্পর্ক সারাজীবনের জন্য।আজ আমার বাবা মা থাকলে তাদের জন্য যা করতাম।মামা মামীর জন্য তাই করবো। আমার এতটুকুই বলার ছিল।

তারেক এতক্ষণ মুগ্ধ হয়ে রিতার কথা শুনছিল।আজকাল যেখানে জমি জায়গার জন্য ভাই বোন মারামারি করে। সেখানে রিতা তার সবকিছু তার মামাকে দিয়ে আসতে চায়।সত্যি বলতে তারেকের বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি কম না।সে নিজেও খুব ভালো চাকরি করে। রিতার এই বাড়ির প্রতি তার কোনো লোভ নেই। খুব ভালো একটা মনের মেয়ে ছাড়া তারেকের আর কিছুই চাই না।যে কিনা তার মা’কে নিজের মায়ের মতো দেখবে।

তারেক চুপ করে আছে দেখে রিতা জিজ্ঞেস করলো আপনি কিছু বলতে চেয়েছিলেন।তারেক বলল,তেমন কিছু না।মনে হয় না তা আর বলার দরকার আছে। এবার রিতা একটু চিন্তায় পড়ে যায়। সে আবারও জানতে চায়। তারেককে বলে, বলেন প্লিজ। আমি কিছু মনে করবো না।যা বলার আগেই বলা ভালো। যা বলার আমাকেই বলেন।আমি চাই না মামা কিছু শুনে কষ্ট পাক।

তারেক বুঝতে পারছিল রিতা বেশি চিন্তা করছে। তাই বলেই দিল।তারেক বলল,আমি বলতে চেয়েছিলাম যে আমার মা ছাড়া কেউ নেই। আমার মা যেন কোনকিছুতেই কষ্ট না পায়।যা বলার আমাকে বলবেন।মায়ের বয়স হয়েছে তাই অনেক সময় যা মনে আসে বলে দেয়।নিজের মা ভেবে ভুলে যাবেন।বা আমাকে যা বলার বলবেন।আর আপনি খুব সুন্দর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।আপনার জন্য আপনার মামা যা করেছেন তার ঋণ কখনোই শোধ হবে না। আর বাড়িটা আপনার। তাই সিদ্ধান্তও আপনার। এখানে আমার কিছু বলার নেই। তবে আমি অনেক খুশি হয়েছি আপনার এমন উদার মনমানসিকতা দেখে। এখন আমি নিশ্চিত আমার মা’কে আপনি নিজের মায়ের মতোই দেখবেন।রিতার চোখে আনন্দ অশ্রু আজ।তারেকের কথা তার খুব ভালো লেগেছে।

তারেক বিদায় দেওয়ার সময় রিতাকে একটা গিফট দিয়ে বলল,এটা বাসায় গিয়ে খুলবেন।আর মন খুলে এত কথা যখন হলোই।তখন তুমি করে তো বলাই যায়।রিতা মৃদু হেসে বলল,আপনি শুরু করেন।আমি চেষ্টা করবো।তারেক হেসে বলল,আচ্ছা। অপেক্ষায় থাকলাম।রিতার চলে যাওয়া পথের দিকে তারেক কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো।আর মনে মনে বলল,সত্যি তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি আমি।

বাড়িতে গিয়ে রিতা গিফটের প্যাকেট খুলে দেখে একটা চেইন সহ লকেট।সেই লকেটেট ভিতর তারেক আর রিতার আংটি পরানোর ছবি। জিনিসটা খুব পছন্দ হলো রিতার।সাথে একটা চিরকুট। তাতে লেখা এটা আমাদের সুন্দর মূহুর্তের স্মৃতি হয়ে থাকলো।রিতা নিজের অজান্তেই হেসে দিল।তার মনটা আজ খুব ভালো।

এর মধ্যেই মামা মামী সব শপিং করেছেন।সাথে অবশ্য রিতাও ছিল। রিতা বাড়ির সবার জন্য নিজেও শপিং করেছে। এর ফাঁকে তারেকের জন্য একটা ঘড়ি কিনেছে। বেশ ঘটা করে রিতার মামা রিতার বিয়ের আয়োজন করেছেন।হলুদের অনুষ্ঠানও হলো খুব সুন্দর করে। মামা মামীর মনটা ধীরে ধীরে কষ্টে ভরে যাচ্ছে। একটা মেয়ে বাড়ি ছেড়ে গেলে।বাড়িটা শূন্য মনে হয়।

বিয়ের আগের রাতে সবাই এক সাথে বসে আছে। এমন সময় হাজেরা রিতার মায়ের গহনা গুলো এনে রিতাকে দিয়ে বলে,এগুলো তোমার মায়ের। কাল এগুলো দিয়ে সাজবে।রিতা মায়ের গহনা গুলো হাত বুলিয়ে দিয়ে কেঁদে ফেললো।মায়ের ঘ্রাণ লেগে আছে যেন।মামী আজ প্রথম বার রিতাকে বুকে টেনে নিলেন।সত্যি আজ যদি রিতার মা বেঁচে থাকতো।রিতা মায়ের গহনা গুলো হাজেরাকে দিয়ে বলল,এখন রাখো মামী।কাল দিও।

রিতা মামার হাতে বাড়ির দলিল দিয়ে বলল,এটা তোমার বাড়ি আজ থেকে মামা।এটা আমার বাবার বাড়ি হয়েই থাকলো।মা বাবা মৃত্যুর পর তোমারই আমার সব।তুমি বাবার মতো আছো।আর মামাী আমার মায়ের মতো।আমি এই বাড়ি থেকে বিদায় হলেও যেন আমি এতিম না হই।এটা আমার বাবার বাড়ি হয়েই থাকলো।এই বাড়ি আমি তোমার নামে লিখে দিলাম।আমি এখানে সারাজীবন আমার অধিকার নিয়ে আসতে চাই।তোমরা আমার ভালোবাসার ছাঁদ। চিরকাল আমার মাথার উপর তোমাদের হাত রেখো মামা।

মামা রিতাকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। মা মরা মেয়েটাকে নিজের মেয়ের মতো করে দেখছে সব সময়। কিন্তু মামুন এই বাড়ি তো নিতে পারবে না।এটা সে চায় না।রিতাকে ভালোবাসার বিনিময়ে সে কিছু চায় না।কখনো এমনটা চায়নি।মামুন রিতাকে বলল,এটা হয় না মা।এটা তোমার বাবার বাড়ি। এটাতে সম্পূর্ণ তোমার হক।এখানে আমি তোমার জন্য যা করেছি।তা আমার মেয়ে বলেই করেছি।আমার বোনের জন্য করেছি।

রিতা মামার হাতে কাগজ গুলো দিয়ে বলে,এটা তোমাকে রাখতেই হবে মামা।আজ আমার বাবা মা থাকলেও আমি এই বাড়ি নিতাম না।আমি সারাজীবন তোমাদের নিয়ে থাকতে চাই। বাবা মায়ের জন্য যা করতাম।তোমাদের জন্য তাই করবো।এ বিষয়ে আমি তারেকের সাথেও কথা বলেছি মামা।তারেক রাজি না হলে এ বিয়ে হতো না।তোমরাই আমার সব।তোমরা আমার জীবনের সবচেয়ে দামী সম্পদ।মামী রিতাকে বুকে টেনে নিলেন। দোয়া করে দিলেন রিতার জন্য। আর বললেন,সারাজীবন এই বাড়ি তোমার বাবার বাড়ি হয়েই থাকবে।প্রতিটা মেয়ের বাবার বাড়ি থাকে।তোমার কেন থাকবে না?তোমার সম্পূর্ণ অধিকার থাকবে এই বাড়িতে। আমার তিন সন্তানের সমান অধিকার থাকবে এই বাড়ির উপর।

অনেক ধুমধাম করে রিতার বিয়ে হলো।নতুন জীবনে রিতা অসম্ভব ভালো একজন শাশুড়ি মা পেয়েছে। তারেক সত্যি অসাধারণ একটা ছেলে। তারেককে পেয়ে রিতা সত্যি সুখী।প্রচন্ড রকম ভালোবাসে তারেক রিতাকে।রিতাও তারেককে মন থেকে ভালোবাসে।রিতা নতুন জীবনে অনেক সুখী। আর মামা মামীর সাথে তার সম্পর্ক আজীবন এমনই থাকবে।তার মামাতো ভাই বোন দুটো রিতার জন্য পাগল।প্রতি দিন কথা হয়।প্রায়ই ওরা চলে আসে রিতাকে দেখতে।রিতা জীবনে যা চেয়েছে তার থেকে বেশি পেয়েছে। হয়তো বাবা মায়ের দোয়া আছে সাথে তাই।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
100 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

121 thoughts on “ভালোবাসার ছাঁদ

  1. Heya i’m for the first time here. I came across this board and I find It really useful & it helped me out a lot. I hope to give something back and help others like you helped me.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social profiles