গল্প-ঃ সংসার

image editor output image 1372477244 1630790581720
Read Time:16 Minute, 23 Second

একটা মেয়ে যতটা ভালোবাসা আর মায়ায় বেড়ে ওঠে। তার বাবার বাড়ির দরজাটা পাড় হয়ে আসলে ততটাই কষ্ট আর অবহেলার হয়ে ওঠে। হাজার দায়িত্ব পালনেও দায়িত্বশীল হয়ে উঠতে পারে না। নিজের জন্ম আর রক্তের সম্পর্ক দূরে রেখেও নতুন মানুষগুলোর আপন হতে পারে না। মৃত্যু পর্যন্ত শুনতে হয় পরের মেয়ে। মেয়ে কালো হলে তার সব ভালো কালো হয়ে যায়। আর সুন্দরী হলেও বাবার বাড়ির খোঁটা রেডি থাকেই।

মিতু নতুন বউ হয়ে এসেছে এ বাড়িতে দুই দিন হয়। সব মেহমান এখনো যায়নি।খুব কাছের মানুষগুলো এখনো বাড়িতেই আছে। বিয়ের অনুষ্ঠান ঢাকায় না হয়ে বাড়িতেই হলো। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান নিলয়। তাই সবাই যেন থাকতে পারে এজন্য বিয়েটা গ্রামের বাড়িতেই হয়েছে। মিতুর বাবাও মেনে নিয়েছে বিষয়টা। কারো অনুভূতির মূল্য অনেক বেশি।
মিতুকে তার দাদি শাশুড়ি বলল
— রান্না কি কিছু পারো? নাকি মা শুধু পড়ালেখাই শিখিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে?আজ আমাদের কিছু রান্না করে খাওয়াবে। ঢাকার মানুষ কি খায় জানি না। আমরা যা খাই তাই করবে।
দাদির কথা শুনে মিতু চলে যায় রান্না ঘরে। দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। শাশুড়ি মা রান্না ঘরে এসে বলল
— সত্যি কি রান্না করতে পারো? তোমার মা বলেছিল
অনেক কিছুই নাকি পারো।তাহলে শুরু করে দাও।রান্না ঘরে সবই আছে। মিতু সত্যি অনেক কিছুই পারে।কিন্তু নার্ভাস হয়ে সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। তবুও শুরু করে দিল। মিতুর মা মজার পায়েস রান্না করে। মিতু তার কাছে থেকে শিখেছে।পায়েস রান্না করলো বড়দের জন্য। আর নুডলস রান্না করলো ছোটদের জন্য। তারপর সাজিয়ে পরিবেশন করলো সবার সামনে।ছোটরা খুব খুশি হলো।কিন্তু দাদি রেগে বলল

— একি শুধু পায়েস? আর কিছু পারো না? তোমার মা এত গল্প দিলো বিয়ের আগে তাদের মেয়ে সব পারে। দেও দেখি কি রান্না করেছো?
মিতুর খুব কষ্ট লাগলেও কিছু না বলে হাসি মুখে সবাইকে দিল। খেয়ে যে যার মতো কমেন্ট করলো।কেউ বলে মিষ্টি কম,কেউ বলে মিষ্টি বেশি। কেউ তো বলল এও কি খাবার জিনিস? কেমন দুধ ভাত লাগল।কি শিখিয়ে বিয়ে দিল তোমাকে?

নিলয়ের মা শেষ পর্যন্ত বলল
— এত বড় বড় কথা বলে এসব কি রান্না করে আনলে? নাক কাটালে আমার।এ বাড়ির অন্য বউরা তোমার চেয়ে রূপে বা গুণে কম না।সবাই বড়লোকের মেয়ে। তবুও সব কাজ জানে।আমার এত সুন্দর আর শিক্ষিত ছেলের জন্য তোমার মতো বউ আনলাম? মিতুর আর সহ্য হলো না।এখানে দাঁড়িয়েই কেঁদে দিল।
নিলয়ের একটু খারাপ লাগল।সে বলল
— মা পায়েসটা কিন্তু মজা হয়েছে। আমি মিষ্টি তেমন খাই না।তবুও বাটির সবটুকুই খেলাম।আর ও নতুন এসেছে। হয়তো নার্ভাস হয়ে একটু এদিক সেদিক হতেই পারে।এভাবে না বললেও হত।
দাদি এবার খোঁচা দিয়ে বলল
— নিলয়ের মা তোমার ছেলে দেখি দুই দিনেই তোমার আঁচল ছেড়ে বউয়ের আঁচলের তলে গেছে। আর পেয়েছো ছেলেকে। এখনি বউয়ের গোলামি করে। বছর গেলে ছেলেকে চিনবে না।
নিলয়ের মা খুব রেগে যায় নিলয়ের উপর। সে বলে
— তাই তো দেখছি মা। এই জন্যই ছোট পরিবারের মেয়ে ভালো লাগে না আমার।এক সাথে থাকতে জানে না। কয়দিন পর নিলয়কে আসতেই দিবে না গ্রামে।
নিলয় আর কথা বাড়াতে চাচ্ছে না।তাই মিতুকে ঘরে চলে যেতে বলল।আর নিজেও বাজারে চলে গেল।
বিকালে মিতুর বাবা এলো মিতু আর নিলয়কে নিয়ে যেতে। মেয়ের সুখ দেখতে চায় সব বাবা মা’ই। মেয়ে বড় হওয়ার পর থেকেই সুখের একটা সংসারের স্বপ্ন দেখে মেয়েটা আর তার পরিবার।
কিন্তু নিলয়ের দাদি আর মা যা না তাই বলল মিতুর বাবাকে। মেয়েকে কিছু শেখায়নি। মেয়ে কিছু পারে না।এত ভালো ছেলের বউ এমন হলো।কত ভালো ভালো বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল।নিলয়ের বাবা মিতুকে পছন্দ করে আনলেন। মেয়েকে এরপর সবকিছু শিখিয়ে পাঠাবেন।না হলে দাসী বেঁধে দিবেন মেয়ের সাথে। যেন আমার ছেলের কষ্ট না হয়।আড়ালে দাঁড়িয়ে কাঁদছে মিতু।তার জন্য বাবা প্রথম এত কথা শুনছে।
নিলয় তার মা’কে থামিয়ে দিয়ে বলল
— রাত হয়ে যাচ্ছে মা।এখন রওনা দিতে হবে।
নিলয়ের দাদি এখানেও খোঁচা দিয়ে বলল
— চলে এসো।আবার ঘর জামাই হয়ে থেকে যেও না। এখনই বউয়ের গুণ গাও। শশুর বাড়ির কথা সহ্য হয় না। বউয়ের কথায় চললে জীবনেও শান্তি পাবে না।
মনে কষ্ট নিয়ে চলে আসলো মিতু তার বাবার সাথে। নিজে যা শুনেছে তার জন্য এত কষ্ট লাগেনি।কিন্তু বাবার মাথা নিচু হয়ে গেল।বাবাকে কত কথা শুনে আসতে হলো। বাবার মনের দুঃখ বুঝতে পারছে মিতু।বাবার মুখটা মলিন হয়ে আছে। মিতু কোনদিনই এই কষ্ট ভুলতে পারবে না।

খুব ছোট ছোট বিষয় সুন্দর করে ভালোবাসা দিয়ে বোঝানে যায়।কষ্ট দিয়ে ভালোবাসা বা সম্মান পাওয়া যায় না। ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা জয় করতে হয়। ছোট একটা জীবনে কাছের মানুষদের আগলে রাখা উচিত। ঘৃণা থেকে ঘৃণা বাড়ে। সবকিছু ছেড়ে আসা একটা মেয়ে ভালোবাসা আর দোয়া ছাড়া কিছুই চায় না। সে সবার জন্য নিজেকে ভুলে যায়। আর সবাই তাকে ভুলে না কষ্ট দিতে।

মিতু সমস্ত রাস্তা ভাবতে ভাবতে আসলো
—যে মেয়ে বাবা মাকে সন্তুষ্ট করতে হয়তো ভালো রেজাল্ট বা এক কাপ চা বানিয়ে খাইয়েছিল।আজ সে সকলকে চৌদ্দ বেলা পেট পুরে খাওয়ালেও সামান্য প্রশংসা পায় না। একমাত্র আদরের মধ্যমনি নতুন বাড়ির চক্ষুশূল হয়ে পাড়ি দেয় কয়েক যুগ।
মা বলে ডাকলেও মা হয়ে যায় না। ভাই বোন মনে করলেও ভাই বোন হয় না।বাবা বাবা বলে ছুটে এলেও বাবার দরদ থাকে না।

কিন্তু মিতু এতটুকু আশা পেল যে, নিলয় ওকে বুঝতে পারে। ওর পক্ষ নিয়ে কথা বলে। বাড়ি যেয়েও মিতুর মন খারাপ দেখে নিলয় মিতুর হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল
— তুমি কী মায়ের কথায় অনেক কষ্ট পেয়েছ? হয়তো মা কঠিন করে কথা বলেছে। মা কিন্তু এতটা খারাপ না। এ বাড়িতে মা যখন আসে তখন ঠিক এই আচরণটাই মা পেয়েছিল। মা’কে সবাই ভালোবাসতে শুরু করে অনেক পরে। মা তার ভালোবাসা দিয়ে সবার মন জয় করেছে। দাদী আগা গোড়াই এমন। কিন্তু মা তার কথা সম্মান করে মানত।ধীরে ধীরে মা দাদীর মনে জায়গা করে নেয়। প্রথমে দাদীও ভয়ে ছিল মা হয়তো বাবাকে তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু মা কখনো তা করেনি। মা সবসময় দাদীর কাজের প্রশংসা করতো। দাদীর মতো কাজ কীভাবে সুন্দর হয় তা মা দাদীর কাছ থেকে শিখেছে। সবাইকে কীভাবে এক সংসারে রাখতে হয় তা দাদী মা’কে বুঝিয়ে দিয়েছে। আমি জানি তুমিও তা পারবে। বাবা যেভাবে মায়ের সাথে ছিল। আমিও সবসময়ই তোমার সাথে থাকবো।তুমি শিক্ষিত মেয়ে। বুদ্ধি আছে তোমার। কীভাবে মা আর দাদীর মন জয় করতে হয় তা তুমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারবে।আর ভয় নেই আমি আছি তোমার সাথে। এখানে সবার সামনে মন খারাপ করে থাকলে তোমার বাড়ির মানুষের কষ্ট লাগবে। তারাও চিন্তা করবে। আর তোমার শশুর বাড়ির মানুষের বদনাম হবে। এখন তো ওটাও তোমার বাড়ি।

মিতু মুগ্ধ হয়ে নিলয়ের কথা গুলো শুনল।এত মায়া লাগল নিলয়ের কথা শুনে মিতুর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। নিলয় মিতুর চোখ মুছে বলল, এখন কাঁদছো কেন? আমার কথায় কষ্ট পেলে নাকি?

মিতু বলল, না কষ্ট পাইনি।সত্যি আমার ভাগ্য অনেক ভালো। তোমার মতো এত ভালো মানুষ পেয়েছি জীবনে। আমি চেষ্টা করবো সবসময় সবার মন জয় করতে। বুঝতে পারছি কঠিন হবে।তবে তুমি পাশে থাকলে পারবো আমি।

নিলয় খুব খুশি হলো যে মিতু ওর কথা বুঝতে পেরেছে। নিলয় মিতুকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমার বউ দেখি অনেক লক্ষী। মিতু লজ্জায় লাল হয়ে গেল।

একদিন পর মিতু আর নিলয় চলে আসলো বাড়িতে।যদিও তাদের আরও দুই দিন থাকার কথা ছিল। কিন্তু মিতু নিজের থেকে নিলয়কে বলল, চলো বাড়িতে যাই। ঢাকায় যাওয়ার আগে কয়েকদিন বাড়িতে থাকতে চাই। আমি মা’কে আর দাদীকে আমাদের সাথে ঢাকায় নিয়ে যেতে চাই। আমাদের সংসার তারাই গুছিয়ে দিবে।

নিলয় সত্যি খুব অবাক হয়। মিতুকে বেশ ভালো আর বুদ্ধিমতি মনে হয়।সত্যি বলতে একই পরিবারে দুই পক্ষ হলে অনেক বড়ো বিপদ। ছেলে কার পক্ষ নিবে মা না বউয়ের? এটা সত্যি মহা সংকট।

বাড়িতে ফিরে এলে নিলয়ের মা জানতে চাইল, কীরে তোরা না আরও দুই দিন পরে আসবি? নিলয় হেসে বলল, মিতু চলে আসতে চাইল।বলল, তোমার সাথে থাকবে কিছু দিন। কতকিছু শিখতে হবে তোমার কাছে।
দাদীর পছন্দের কিছু রান্না শিখতে চায় তোমার কাছে। আর ওর বাবার বাড়িতে তোমার আর দাদীর এত প্রশংসা করেছে যে সবাই খুব খুশি হয়েছে। নিলয় মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে মা হাসছে।মানে খুশি হয়েছে।

নিলয়ের মা বলল, যাক তোর বউ এতটুকু তো জানে বাপের বাড়িতে শশুর বাড়ির বদনাম করতে নেই। আমি শিখিয়ে দিব। ওকে বলিস দাদীর কাছে কাছে থাকতে
আর কী কী লাগে তা জিজ্ঞেস করতে।মুরুব্বি মানুষের দোয়া খুব দরকার জীবনে।

নিলয় বলল, আচ্ছা মা তা বলে দিব। সত্যি নিলয়কে পাশে পেয়ে মিতু খুব অল্প দিনেই সবার মন জয় করতে পারলো। ঢাকায় আসার দুই দিন আগে থেকেই মিতু জেদ করে বসলো।মা,বাবা আর দাদীকে ছাড়া সে ঢাকায় যাবে না। একা একা থাকতে পারবে না।সবাইকে নিয়ে এক সাথে থাকবে। পরে মা আর দাদী রাজি হলো যেতে। তবে কিছু দিনের জন্য। তারা ঢাকার বদ্ধ পরিবেশে থাকতে পারে না।

ঢাকায় এসে মিতু সংসার সাজানোর সব দায়িত্ব শাশুড়ি আর দাদীকে দিল। যদিও নিলয়ের মা বলছিল, তোমাদের সংসার তোমরা তোমাদের মতো করে সাজাও।কিন্তু মিতুর বলাতে ওর শাশুড়ি খুব খুশি হলো।সবাই মিলে সংসারের যা যা লাগে কেনাকাটা করলো।সবকিছুই মোটামুটি শাশুড়ির পছন্দের জিনিস নিল। যদিও নিলয় মিতুকে বলেছে, পরে তোমার যা লাগে তুমি নিজের পছন্দে কিনে নিও। তবে মিতুর শাশুড়ি সব সুন্দর জিনিস গুলোই কিনেছে তার ছেলের বউয়ের জন্য। নিজের হাতে ছেলের নতুন সংসার সাজানোর আনন্দই আলাদা।

কিছু দিন পর নিলয়ের দাদী আর থাকতে চাইলো না।তার ঢাকায় দমবন্ধ লাগে। যাওয়ার দিন মিতু অনেক কাঁদল। সত্যি তার অনেক কষ্ট লাগছে। একা এই বাসায় কীভাবে থাকবে? এই কয়দিনে মিতুর শাশুড়ি মিতুকে অনেক আপন করে নিয়েছে। দাদী আর শাশুড়ি তাদের জীবনের কতো গল্প যে মিতুকে বলেছে। মিতুও খুব মজা পেয়েছে তাদের কাহিনী শুনে। সারাদিন মিতু যে গল্প শুনে রাতে তা আবার নিলয়কে বলে। মিতুর কান্না দেখে দাদী আর মিতুর শাশুড়িও কাঁদে। পরে নিলয় হেসে বলে, তুমি তো দেখি মা আর দাদীকে ছাড়া থাকতে পারবে না। আবার কী পাঠিয়ে দিব তাদের সাথে? নিলয়ের বাবা বলল, তাহলে আমি তোর সাথে থাকি। তারা চলে যাক বাড়িতে। মিতু বলল, না বাবা।আপনি আর নিলয়ও চলেন বাড়িতে। সবাই হেসে উঠলো। কিছু দিন পর বাড়িতে যাবে বলে নিলয় মিতুকে শান্ত করলো।

দাদী,বাবা আর মা নিলয় ও মিতুকে দোয়া করে চলে গেল। তারা চলে গেলেও অনেক অনেক ভালোবাসা ও দোয়া রেখে গেল। সম্পর্কটা মজবুত করে গেল। বাড়িতে প্রতি দিন কল দিয়ে সবার খোঁজ নেয় মিতু। ঢাকায় কী হচ্ছে না হচ্ছে সব খবর মিতু তার শাশুড়িকে জানায়। আর নিলয় কিছু বললেই তার বিচার সরাসরি দাদী করে। মিতু একদম মিশে গেছে সবার সাথে।

মিতু ওর মা’কে কল করে যখন শশুর বাড়ির প্রশংসা করে তখন সত্যি তারা খুশি হয়। চিন্তা মুক্ত থাকে। সংসারের মানুষের মাঝে ভালোবাসা খুব দরকার। আপন হতে হয় সবার কাছে। কেউ আপন ভাবুক এটা চাইলে আপন করে নিতে হবে অন্যদের। সবার মাঝেই হারানোর ভয় থাকে। এই ভয় দূর করতে হয়।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

3 thoughts on “গল্প-ঃ সংসার

  1. Heya are using WordPress for your site platform? I’m new to the blog world but I’m trying to get started and create my own. Do you require any html coding knowledge to make your own blog? Any help would be greatly appreciated!

  2. Hello just wanted to give you a quick heads up. The words in your article seem to be running off the screen in Safari. I’m not sure if this is a formatting issue or something to do with internet browser compatibility but I figured I’d post to let you know. The design look great though! Hope you get the problem fixed soon. Thanks

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social profiles