চার বছরের সম্পর্কের আজ ইতি হলো। যাকে নিজের সমস্ত হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসলাম আজ সে একটা অজুহাত দেখিয়ে চলে গেল।কারো জীবনের বোঝা কেউ বইতে চায় না।আমার কাছে আমার বোনের মেয়ে তনু বোঝা না হলেও আতিকের কাছে বোঝা হয়ে গেছে। আমাকে আতিকের মা মেনে নিলেও তনুর দায়িত্ব তারা নিবে না। মা হারা তনুকে কী করে একা করে কার কাছে দিয়ে যাই আমি? নিজেকে এতটা স্বার্থপর হতে দিতে পারি না আমি। জন্মের পর থেকে তনু আমাকেই আম্মু বলে ডাকে।তনু আমার মনে আর রক্তে মিশে আছে। আমি তনুর জন্য সমস্ত পৃথিবী ছাড়তে পারি।
আপার মৃত্যুর সময় ওর হাত ধরে কথা দিয়েছি তনু আমার মেয়ে। আমি কোনদিন ওকে একা ফেলে যাবো না। আপাকে বিয়ে করে দুই মাস পর দুলাভাই সৌদিআরব যায়। সেখানে কারখানায় আগুন লেগে মৃত্যু হয় দুলাভাইয়ের। আপা সেই শোকে দিন দিন শেষ হতে থাকে।দুলাভাই মৃত্যুর পর আপার শশুরবাড়ির কেউ আর আপার খবর রাখেনি।আপার পেটে তখন তনু।আপা ঠিক মতো খেত না।শুধু উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত।তনু হওয়ার সময় আপাকে আর বাঁচান গেল না।আপা আমার হাতে তনুকে দিয়ে গেল।
আতিককে সবকিছু আগের থেকেই জানিয়ে ছিলাম।এখন যখন আতিক তার মা বাবাকে তনুর কথা বলেছে তখন তারা এটা মানতে রাজি নন।আমাকে বউ হিসাবে মেনে নিলেও তনুকে তারা কিছুতেই মেনে নিবে না।কিন্তু আমি তনুকে ছাড়া থাকতে পারবো না।তনুকে জন্ম না দিলেও আমি তার মা।শুধু ওকে পেটে রাখিনি আর জন্ম দেইনি।বাকি সবকিছু করেছি আমি। আপার মৃত্যুর পর বাবা মা কেমন যেন হয়ে গেল। সবসময়ই অসুস্থ থাকত।সব দায়িত্ব আমার উপর তখন। বাবা মাও ছেড়ে চলে গেছে দুই বছর হয়।এখন আমি আর তনু মিলে আমাদের একটা সংসার।পাঁচ বছরের তনু আমাকে আমার মায়ের মতো ভালোবাসে।আমি খেয়েছি কি-না দেখে। কোন জামায় আমাকে সুন্দর লাগবে এট বলে দেয়।আমার অসুখ হলে মা যেভাবে পাশে থাকত।সেভাবেই বসে থাকে।তনুকে বুকে জড়িয়ে ধরলেই সব দুঃখ দূর হয়ে যায় আমার।
আতিক চলে যাওয়ার কষ্ট অতটা লাগেনি যতটা লাগার কথা। কারণ যে মানুষটাকে আমি ভালোবাসি সে যদি আমার ভালোবাসাকে না বুঝতে পারে।তাকে ধরে রেখে কী লাভ?এতটা ছোট মন আতিকের যে সে তনুকে কোন এতিমখানায় দিয়ে আসতে বলে।ইচ্ছা করছিল কষে একটা চড় মারি।কিন্তু কেন যেন ঘৃণা হলো ওকে ছুঁতে। তাই শুধু ওকে চলে যেতে বললাম।যাওয়ার সময় আতিক শুধু বলে গেল, আমার মতো মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে না।আমি বিয়ে না করেই এক বাচ্চার মায়ের মতো দেখতে।আমার তাতে আনন্দই লাগল। সত্যি তাহলে আমি তনুর মা হতে পেরেছি।আপা তাহলে আজ অনেক খুশি।তনুর জন্য চাকরি করা হলো না।তাহলে ওকে কে দেখবে? তাই ছোট করে একটা ফাস্ট ফুডের দোকান দিয়েছি।ওটা এখন খুব ভালো চলে।আমাদের খুব ভালো করেই চলে যায় দিন।
হঠাৎ করে তনু অসুস্থ হয়ে যায়। জ্বর কিছুতেই কমছিল না। তাই আমি ওকে নিয়ে হাসপাতালে যাই। ডাক্তার ওকে ভর্তি করতে বলে।হাসপাতালের এক ডাক্তার এসে আমাকে দেখে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।আমারও কেমন যেন লগে।সে তনুর সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে। তনু বেশ খুশি হয়।কথা শেষে আমাকে কিছু না বলে নার্সকে ডেকে ঔষধ গুলো বুঝিয়ে দেয়।আর বলে খুব ভালো করে খেয়াল রাখতে।সে চলে যাচ্ছিল।হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে আমর সামনে এসে বলে আমার যদি ভুল না হয় আপনি মৌসুমি না? আমি খুব অবাক হলাম।এই লোক আমার নাম জানে কী করে?তনুর ডাক্তার তাই ভদ্র ভাবেই বললাম, জি।
সে হেসে বলল, আমাকে তাহলে চিনতে পারনি।আমি তোমার বাবার ছাত্র ছিলাম।তোমাদের বাসায় আসতাম পড়তে। তুমি করে বললাম। কিছু মনে করো না।কারণ তুমি আমার থেকে ছোট ছিলে।তখন তুমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়তে।আমাকে হয়তো মনে পড়ছে না তোমার।
আমি সত্যি তাকে চিনতে পারিনি। অনেকেই আসত বাবার কাছে পড়তে।ইংরেজির প্রফেসর ছিলেন বাবা। বাবার কাছে যারা পড়তে আসত তাদের মধ্যে শুধু আতিকেই মনে আছে। ওকেই যে ভালোবাসতাম।ডাক্তার বলল, আমার নাম রিফাত।স্যার কেমন আছেন?
আমি বললাম, বাবা মা দুই বছর হয় মারা গেছেন।
রিফাত বলল,সরি।আমি জানতাম না।এক বছর হয় দেশে এসেছি।কারো কোন ঠিকানা নেই আমার কাছে।চার বছর পড়েছি স্যারের কাছে। অত্যন্ত স্নেহ করতেন আমাকে। বড় আপু কেমন আছে? আমি এবার সত্যি কথা বলতে পারছিলাম না।মনে হচ্ছিল সবার চলে যাওয়ার হিসাব গুনছি।তবুও বললাম, আপু তনু হওয়ার সময়,,,,। আপু নেই চলে গেছে। এখন আমিই তনুর মা।রিফাত এবার আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারে।
রিফাত সরি বলে।আমার দিকে একটা রুমাল দিয়ে বলল, আমি জানতাম না এসব।তনু এখন ঘুমাচ্ছে। নার্সকে বলে দিচ্ছি ওকে দেখবে।নিচে ক্যান্টিকে কফি আছে। যদি আপত্তি না থাকে চলো গিয়ে একটু বসি।তনুকে নিয়ে তোমার এমনিতেই মন খারাপ। আমি আরও কষ্ট দিলাম।
আমি বললাম, সমস্যা নেই। আমি এখন অনেক শক্ত। কফি খাবো না।তনুকে একা রেখে যাবো না।রিফাত চলে গেল। একটু পরে দুই কাপ কফি নিয়ে ফিরে এলো।বলল,আসো বারান্দায় বসি।এখন আর না করতে পারলাম না। বারান্দায় বসে রিফাতের গল্প শুনলাম।আমার আর তনুরও কথা বললাম। সারারাত এভাবেই কেটে গেল।আতিক ছাড়া কারো সাথে এত দীর্ঘ সময় কথা বলিনি কখনো।
আজ কেন এত কথা বললাম জানি না।হয়তো রিফাত খুব আপন করে সব বলছিল বলে।রিফাতের বাবা নেই। মা আর দুই বোন আছে। বোনেদের বিয়ে হয়েছে। এখন রিফাত আর তার মা মিলে একটা সংসার। তিনদিন তনুকে নিয়ে হাসপাতালে ছিলাম।রিফাত একদম তনুকে হাত করে ফেলেছে। তিন দিনেই তনু রিফাতের ভক্ত হয়ে গেছে। দু’জনকে দেখলে মনেই হয় না তিন দিনের পরিচয়। আমরা বাসায় যাবো তাই সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছিলাম।রিফাত এসে তনুকে বলল,চলো আমি বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি।আমি বললাম, কষ্ট করতে হবে না।আমরা পারবো।
রিফাত তনুর দিকে অভিযোগের সুরে বলল, দেখ তোমার আম্মু কিন্তু আমাকে নিতে চাচ্ছে না।তনু আমার হাত ধরে বলল,প্লিজ আম্মু রিফাত আংকেল যাক আমাদের সাথে। আমি তনুর জন্য রাজি হলাম।রিফাত গাড়ি দিয়ে আমাদের বাসায় নিয়ে এলো।ভদ্রতার জন্য তাকে বাসায় আসতে বললাম। এক কাপ চা খেতে বললাম। সত্যি চলে এলো সাথে। কিছুক্ষণ গল্প করে তার নম্বর দিয়ে বলল কল করো।তোমার নম্বরটা দেও।তনুর সাথে কথা বলব।বাধ্য হয়ে দিতে হলো।
কীভাবে যেন রিফাতের সাথে একটা বন্ধুর মতো সম্পর্ক হয়ে গেল।মাঝে মাঝে আমার দোকানে আসে।তনুকে দেখতে আসে এখানে।হঠাৎ মনে হলো রিফাত আমাকে পছন্দ করে। তাই একদিন ইচ্ছা করেই আতিকের কথা রিফাতকে জানিয়ে দিলাম।জীবনে আর ধাক্কা খেতে চাই না।সব শুনে রিফাত চুপ করেছিল।শুধু বলল, তনুর মতো মেয়েকে কেউ আপন করতে চায় না এটা আমি ভাবতেই পারছি না। আর তুমি যা করছো তনুর জন্য তা অন্য কেউ পারত না।
আমার মনে হলো রিফাত আর আমার সম্পর্কে অন্য কিছু ভাববে না।সেও আতিকের মতো এখন দূরে চলে যাবে। মাঝে মাঝে আতিকের কথা মনে হলে খুব কান্না পায়।সত্যি এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেল আমাকে।একটা বারও ফিরে এলো না।হঠাৎ একদিন আতিকের এক বন্ধুর সাথে দেখা হলো।সে বলল,আতিক বিয়ে করেছে।আতিকের বউ অস্ট্রেলিয়ায় থাকে।আতিককেও নিয়ে যাবে। আমার কলিজাটা কেউ ছিঁড়ে ফেলল মনে হয়। মানুষ কতটা স্বার্থপর হতে পারে। আমি শুধু শুধু ওর অপেক্ষা করছিলাম।
বেশ কিছুদিন পর বিকালে রিফাত তার মা’কে নিয়ে আমার দোকানে এলো। আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল ওর মা’কে। সেদিন তনুও আমার সাথেই ছিল। রিফাতের মা-ও তনুকে কোলে নিয়ে রিফাতের মতোই আদর করল।রিফাত তনুকে বলল,এটা তোমার একটা দাদু।রিফাতের মা হাসলো।
যাওয়ার সময় রিফাতের মা বলল,তোমার সাথে কথা ছিল। তুমি চাইলে রিফাতের সাথে আমাদের বাসায় তনু সহ আসতে পারো।বা আমিও তোমার বাসায় আসতে পারি।আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পারি।তাই বললাম, আপনি আসেন আমাদের বাসায়।আমি মোটামুটি ভালো রান্না পারি। আগামী শুক্রবার আসবে বলে চলে গেল। এরপর রিফাতের সাথে কিছু বলার সাহস হয়নি।কেমন যেন ভয় হত।জানি না কী বলবে।তবে তনুর সাথে কথা বলত।
শুক্রবার আমি রান্না করলাম বেশ কিছু। রিফাত তার মা’কে নিয়ে এলো।খাওয়ার শেষে খুব প্রশংসা করলো আমার রান্নার।তারপরে রিফাতের মা আমার সাথে একটু একা কথা বলতে চায়। রিফাত তনুকে নিয়ে অন্য ঘরে গিয়ে গল্প করতে লাগল।আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে উনি যা বললেন,তাতে আমার সত্যি আনন্দে কান্না আসলো।উনি রিফাতের বউ করে আমাকে নিতে চায়। আরও বলল, তবে তনুকে অবশ্যই নাতনি হিসাবে চাই। আমার ঘর খালি হয়ে গেছে মেয়েগুলো চলে যাওয়ার পর। আমি জানি রিফাত তোমাকে এখনো কিছু খুলে বলেনি।তবে ও তোমাকে পছন্দ করে। তুমি কী বলবে তাই বলতে ভয় পাচ্ছিল।আমার সাথে রিফাত সবকিছু শেয়ার করে। আমি সবকিছু জানি।তোমার কী মতামত তা জানালে বাকি কাজ খুব তাড়াতাড়ি করে ফেলব।
আমি ওনাকে শুধু এতটুকুই বললাম, আমার বাবা,মা কেউ নেই। আমার শুধু তনু আছে আর তনুর শুধু আমি।উনি আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, এখন আমারাও আছি তোমার সাথে। রিফাত তনুর সব দায়িত্ব নিবে, ঠিক তুমি যেমন মায়ের মতো পালন করছো। তার এই কথায় আমার সত্যি কী যেন হলো। আমি তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।উনি বুকে নিয়ে বললেন, পাগল মেয়ে আজ তো আনন্দের দিন।সবকিছু আমার উপর ছেড়ে দেও।সব দায়িত্ব আমার। মানুষ আজকাল নিজের জন্য বাঁচে। তুমি তো নিজেকে তনুর মা মনে করে বেঁচে আছো।
রিফাত আমার কাছে এসে বলল, তোমাকে সত্যি কখন যে ভালোবেসে ফেলেছি জানি না।তোমাকে তোমার মতো করেই ভালোবাসতে চাই। তুমি যেমন তনুর মা।আমিও তনুর বাবা হতে চেষ্টা করবো।নিজের সন্তান হলেও তনুকে কখনো আলাদা মনে করবো না।
আমি আতিকের কাছে যা আশা করেছি আজ তা রিফাতের কাছে পেলাম।আমি সত্যি একা থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেছি।বাবা, মা চলে যাওয়ার পর থেকে খুব কষ্ট লাগে একা লাগে।রিফাত আমার হাত ধরে বলল, আমাকে বিশ্বাস করো।কখনো ছেড়ে চলে যাবো না।আমি ওর হাতটা শক্ত করে ধরে কাঁদতে লাগলাম। রিফাত আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল, আজ থেকে কষ্ট বিদায়।আনন্দের হলো শুরু।
তনুকে সব বলার পর তনু খুব খুশি হলো।সত্যি বলতে রিফাত তনুকে খুব আপন করে নিয়েছে। ছোট আয়োজন করে আমার আর রিফাতের বিয়ে হলো।বিয়ের সব শপিং রিফাতের মা আর আমিই করেছি।খুব ভালো লেগেছে তনুর জন্য সবকিছু উনি নিজের পছন্দে কিনেছে।
ঐ বাসায় যেয়ে সবচেয়ে বেশি আনন্দ লেগেছে এটা দেখে যে,তনুর জন্য খুব সুন্দর করে একটা ঘর সাজানো হয়েছে। সমস্ত ঘর খেলনা দিয়ে সাজানো।আমার ঘরের পাশেই তনুর ঘর।
রিফাত আমার হাত ধরে বলল,তনু তোমার খুব কাছেই থাকবে। আমি আর রিফাত দুইজন তনুকে ওর ঘরে নিয়ে গেলাম।তার খুব পছন্দ হয়েছে। রাতে রিফাত তনুকে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে আসলো।
সত্যি রিফাত আমার কাছে আমার সেই স্বপ্নের পুরুষ। যাকে এতগুলো বছর ধরে মনে মনে চেয়েছি।আতিক তার মতো ছিল না।আমাকে রিফাত বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,এখন কী তনুর মাকেও গল্প শুনিয়ে ঘুুম পাড়াতে হবে? আমি ওর গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,এত সহজ না তনুর মা’কে ঘুম পাড়ানো।তনুর মা খুব দুষ্টু।তনুর মতো এত ভদ্র না।
রিফাত ও আচ্ছা বলে,আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর দিল। যার অপেক্ষায় আমি এতগুলো বছর ছিলাম।আজ আমি আপার কথা রাখতে পেরেছি।নিজের মনের মতো একজন সঙ্গী পেয়েছি।আজ আমার সব স্বপ্ন পূরণ হলো।
আমার আর রিফাতের দুই মেয়ে এক ছেলে।বিয়ের ছয় বছর পরও তনুর জন্য রিফাতের ভালোবাসা এতটুকু কমেনি। তনু রিফাতকে আংকেল ডাকত।পরে ধীরে ধীরে তনু রিফাতেই আব্বু ডাকতে শুরু করে। আর রিফাত সত্যি তনুকে নিজের মেয়ে হিসাবে দেখে। আমার শাশুড়ি তনুকে অনেক ভালোবাসে।ঠিক যেমন তমা আর রাখিকে ভালোবাসে।তনু,তমা আর রাখি আমাদের তিন সন্তান। আমার শাশুড়ি সবার কাছে বলে,তার তিনজন নাতি,নাতনি। তমা আর রাখি জানে তনু তাদের বড় বোন।এটাই সারাজীবন সত্য হয়ে থাক।আমি তনুকে জন্ম না দিলেও তনুর মা আমি। তনুর সাথে আমার আত্নার সম্পর্ক।আমার প্রথম সন্তান তনু।
629nvb
I am glad to be one of many visitors on this outstanding internet site (:, thankyou for putting up.
Howdy very cool blog!! Guy .. Excellent .. Amazing .. I’ll bookmark your blog and take the feeds also…I’m happy to seek out numerous useful information here in the submit, we need work out extra strategies in this regard, thanks for sharing.
I like the efforts you have put in this, thank you for all the great content.