গল্প-ঃ দিন বদলের হাওয়া (দ্বিতীয় পর্ব)

IMG 20211022 174002
Read Time:10 Minute, 22 Second

চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সত্যি ভুল ছিল। কারণ এরপর থেকে শাশুড়ি আর শাকিলের আচরণ আরও অসহ্য লাগতে লাগল।ছোট ছোট প্রয়োজনের জন্যও শাকিলের কাছে টাকা চাইতে হতো।কী কারণ তা জেনে তারপর টাকা দিত।হিসাব নিত পাই টু পাই।আমি সত্যি বলতে কখনোই বেহিসাবি ছিলাম না।আমার ইচ্ছা বা প্রয়োজন সবকিছুই শাকিলের ও আম্মার কাছে অপ্রয়োজন মনে হতো।এগুলো নিয়ে আমার সাথে কয়েকবার শাকিলের কথা কাটাকাটি হয়।

যে হাতে নিজের ইচ্ছাতে সবার জন্য সব করেছি।আজ নিজের জন্য বারবার হাত পাততে হচ্ছে। এটা হয়তো বুঝতে পারতাম না।যদি না নিজে চাকরি করতাম।মানসিক ভাবে সবকিছু নিয়ে হতাশা কাজ করছিল ভিতরে ভিতরে। এরপর শাকিলের কাছে আর টাকা চাইনি। আমি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর মা কিছু টাকা পাঠিয়ে দিল।বলল,বাবা বলেছে দিতে।যা মন চায় তাই যেন করি এটা দিয়ে। মনে মনে খুশি হলাম।অনেক সময় বাবা মা না বলতেই অনেক কিছু বুঝতে পারে।

চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর সংসারের কাজ বেড়ে গেল যেন।কারণ এখন চাকরি করি না।আমার হাতে অজস্র সময় এখন। কিন্তু শরীরে শক্তি পাই না।একটু কিছু এমন তেমন হলেই শাকিল রেগে যেত। শাকিল রেগে গেলে আম্মা আরও দুটো কথা বেশি শুনিয়ে যেত।আমি আজকাল কোনকিছু সহ্য করতে পারছিলাম না।শারীরিক অবস্থা মনকে আরও কাবু করে দিচ্ছিল।যেখানে মায়া মমতা পাওয়ার কথা সেখানে মানসিক শান্তি টুকু পাই না।অথচ একটা শিক্ষিত পরিবার এটা।

আট মাস পর রাতে ভালো ঘুম হতো না। ভোরে ঘুম আসতো। তখন খুব কষ্ট হত সকালে উঠতে।শাকিলকে বললাম, সকালে আমি কিছু করতে পারবো না।বুয়াকে বললে, রুটি ভাজি করে দিয়ে যাবে।আর কাপড় গুলো দোকান থেকে আয়রন করে আনো।আমার খুব কষ্ট হয় ইদানীং। সারাদিন কেউ আমার খবর রাখো না। আমার মা’কে আসতে বলো তুমি। এখন একা থাকতে ভালো লাগে না।আম্মা সারাদিন তার ঘরে থাকে।আমার সাথে কোনো কথাই বলে না।আমিও বের হতে পারি না। খুব একা একা লাগে।

শাকিল আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এখন তো তোমার অফিস নেই। তাছাড়া বাড়তি খরচের কোন মানে হয় না।টাকা খুব কষ্টে আসে ঘরে। তুমি যেভাবে কথা বলো তাতে মনে হয়, তুমিই একমাত্র মা হচ্ছো। এখনই এত সমস্যা বাচ্চা হলে কী করবে?

আমার কানে কেউ যেন গরম তেল ঢেলে দিল। আমি শাকিলকে বললাম, টাকা কীভাবে আসে তা আমি জানি।তোমার কথায় চাকরি ছাড়লাম। চাকরি থাকলে এসব খরচ আমিই দিতাম।আর আমি বউ হয়ে এসেছি, বুয়া হয়ে আসিনি।বাচ্চা নিতে চাইলেই হয় না।বাচ্চার মায়ের প্রতিও দায়িত্ব থাকে বাচ্চার বাবার। আমার খেয়াল রাখতে পারবে না তো বাচ্চা নেওয়ার জন্য পাগল হলে কেন? এত টাকার চিন্তা তো চাকরি কেন ছাড়ালে? তুমি তোমার মতো থাকে।আমি তোমার সাথে এভাবে এত অবহেলা সহ্য করে থাকতে পরবো না।আমি কাল বাবার বাড়িতে চলে যাবো।নিজের দায়িত্ব বুঝতে পারলে নিয়ে এসো।না হলে আমি একাই যথেষ্ট আমার আর বাচ্চার জন্য।

আমার শাশুড়ি যে আড়াল থেকে সবকিছু শুনছিলেন তা বুঝতে পারছিলাম। শাকিল আমাকে বলল, তোমার এসবের ফল ভালো হবে না।সমাজে একা একজন মা বাবার পরিচয় ছাড়া বাচ্চা মানুষ করা এত সহজ না।তোমার চাকরি টাও এখন নাই। কী নিয়ে এত বড় বড় কথা বলছো তুমি? আমি অবাক হলাম একটা চাকরি না থাকার জন্য আমাকে কতটা অসহায় মনে করছে শাকিল।

আমি শাকিলকে বললাম, চাকরি একটা গেছে দশটা পাবো।আমি অশিক্ষিত মেয়ে না।নিজের যোগ্যতা আছে। আর তোমার মতো বাবার চেয়ে আমি একাই মা হিসাবে যথেষ্ট। শাকিল হেসে বলল, চেষ্টা করে দেখতে পারো। না পারলে চুপচাপ চলে এসো।তবে মনে রেখো এরপর এসব নিয়ে আর কথা হবে না।

আমি আর সহ্য করতে পারলাম না।শাকিলের সামনেই মা’কে কল করে বললাম,বাবাকে বা বড় ভাইকে আসতে।আমাকে যেন কলাই নিয়ে যায়। তা না হলে যেদিকে চোখ যায় চলে যাবো। মা শান্ত হতে বলল।মা বলল, কাল আর কেউ না আসলেও মা একাই আসবে আমার কাছে। আমি যেন নিজের আর বাচ্চার কথা ভেবে শান্ত থাকি।ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করি।কোনো চিন্তা যেন না করি।আমি কেঁদে ফেলাম।মা’কে বললাম,এতো কথা বলো না মা।চলে আসো প্লিজ।

আমার মনে হচ্ছিল বাবা আসবে না।মা’ই হয়তো আসবে।কিন্তু না বাবা এলো।শুক্রবার তাই শাকিল বাসায় ছিল। বাবাকে দেখে শাকিল আর আম্মা খুব অবাক হলেন।সবাই স্বাভাবিক আচরণ করতে লাগল।কিন্তু বাবার কঠিন চেহারা দেখে বুঝতে পারছি অনেক রেগে আছে। বাবা কারো সাথে কথা না বলে আমাকে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছো মা? আমার হঠাৎ কান্না পেল।বাবার দিকে তাকাতে পারছিলাম না।কাঁদতে লাগলাম। কিছু বলতে পারছিলাম না। বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, যাও তোমার কাপড় গুছিয়ে আনো।আমি কিছু কথা বলবো শাকিলের সাথে।

আমি ভিতরে গেলাম ব্যাগ গুছিয়ে নিতে। তবে ঘরে থেকে বাবার কথা সব শুনতে পারছিলাম। বাবা শাকিলকে বলল, আমার মেয়ে তার দায়িত্ব পালনে কোনো কমতি রাখেনি। তার এই সময় তোমার মানসিক ও শারীরিক সাপোর্টের দরকার ছিল। এটা তো তোমার মতো শিক্ষিত ছেলেকে বলে দিতে হবে বলে মনে করি না।তাছাড়া আমার মেয়েকে বউ করে পাঠিয়েছি।সে এ বাড়ির কাজের লোক না।তুমি তোমার মায়ের দায়িত্ব পালন করো।এটাতে আমি খুব খুশি।কিন্তু আমার মেয়ে তোমার সন্তানের মা।তার প্রতিও তোমার দায়িত্ব ছিল।শুধু ভাত কাপড়ের জন্য মেয়েকে বিয়ে দেইনি আমি।আমার মেয়ে নিজের খরচ নিজেই বহন করতে পারতো বিয়ের আগে থেকে। অসংখ্য মেয়ে প্রেগন্যান্ট হলেও চাকরি করে।তোমার জন্য ওকে চাকরি ছাড়তে হলো।তুমি কোনো সাপোর্ট দিলে না। তুমি ওকে একটু সহযোগিতা করলে ওর চাকরি ছাড়তে হতো না।

শাকিল বাবাকে বলল, আমি যতটুকু পারি ততটুকু চেষ্টা করি ওকে সাহায্য করতে।ও একটু বেশি বেশি করে। মুখের উপর কথা বলে।স্বামীকে সম্মান করে না। আমি তো ওর সাথে আছিই কোনো সমস্যা হবে না।ওকে নিয়ে যেতে হবে না।

বাবা শাকিলকে বলল, তোমার কথায় বুঝতে পারছি কতটা সহযোগিতা করো আমার মেয়েকে।স্বামীকে সম্মান করবে।তারমানে এই না যে তোমার অন্যায় কথা বা কাজ সে মেনে নিবে।তার ভালোলাগা মন্দলাগা সে বলতেই পারে। আর সেটা তোমাকে বুঝতে হবে।

এতক্ষণ পর আমার শাশুড়ি কথা বললেন, আপনার মেয়ে চাকরি করে বলে নিজেকে জমিদার মনে করে। যা ইচ্ছা তাই করতে চায়।মা হবে বলে কী নিজের সংসারের কাজ করতে পারবে না? আমরা কী মা হইনি? সবকিছু করে নিজের খেয়াল রাখতাম।

বাবা বলল, অন্যায় সব সময়ই অন্যায়। এই সময় তার আরাম দরকার। সে জমিদার না হলেও তার যোগ্যতা কম নয়। মেয়েকে সম্মান করবেন ভেবেই বিয়ে দিয়েছি।আমার সামনেই এভাবে কথা বলছেন। অন্য সময় কেমন আচরণ করেন তাও বুঝতে পারছি। আমার ছেলের বউকে নিজের মেয়ের মতো করে রাখি।বিশ্বাস না হলে গিয়ে দেখে আসবেন। বউয়ের বাবা মা’কে যে কথা দিয়েছি তা রক্ষা করেছি।আপনাদের সমস্যা হচ্ছে আমার মেয়ে নিয়ে। এটা আমাকে আগেই জানালে এতদিনে নিয়ে যেতাম। মেয়ে আমার বোঝা না।আমার দায়িত্ব ছিল বিয়ে দেওয়া। দেখে শুনেই বিয়ে দিলাম। জানতাম না এসব ছিল কপালে।

বাবা আমাকে ডাক দিলেন।আমি ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে আসলাম।শাকিলকে বললাম, তোমার কিছুই সাথে নিয়ে যাচ্ছি না।সব রেখে গেলাম।বাবার সাথে চলে গেলাম বাড়িতে। কষ্ট লাগল শাকিল একবারও আমাকে আটকলো না।যেতে নিষেধ করলো না কেউ।

চলবে,,,

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
100%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

4 thoughts on “গল্প-ঃ দিন বদলের হাওয়া (দ্বিতীয় পর্ব)

  1. I simply couldn’t leave your web site before suggesting that I extremely enjoyed the standard information an individual provide for your guests? Is going to be again steadily in order to inspect new posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social profiles