বাবার অপমান

208278767 4064879960263650 4692247534464937150 n
Read Time:7 Minute, 12 Second
তনু বারান্দায় এসে অঝোরে কাঁদতে লাগলো। কিছুতেই কান্না থামছে না।তার বাবা আজ তার কারণে এতগুলো মানুষের সামনে অপমানিত হয়ে চলে গেল। শুধু বারবার মনে মনে বলছে,আমাকে ক্ষমা করো বাবা।আমি তোমার লজ্জার কারণ হলাম।আমি তোমার মতো বাবার যোগ্য না।আমাকে আর তোমার মেয়ে বলো না।তনুর স্বামী হাসান এসে তনুকে ডাকলো।কোন কথা বলতে পারছে না তনু।রাগে দুঃখে হাসানের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।পারলে তার মনে যে আগুন জ্বলছে তাতে হাসানকে পুড়িয়ে দেয়।
যখন হাসানের সামনে তনুর বাবাকে হাসানের মা যাতা বলে অপমান করলো। তখন বোবা হয়েছিল হাসান।অথচ তনুর সাধারণ কথাতেও হাসান রেগে যায়। সাফ সাফ তনুকে হাসান বলেছে,আমার মা বাবাকে কখনো কিছু বলবে না।আমার ভাইদের সাথে সুন্দর আচরণ করবে।যেখানে সে সব জানে পরিবারের মানুষের মূল্য কত।তাদের সাথে কতটা আন্তরিক হতে হবে। তাহলে আজ আমার বাবাকে এভাবে অপমানিত হওয়া চেয়ে চেয়ে দেখলো কেন?
গতবছর বাবা অসুস্থতার জন্য ঈদে আমার শশুর বাড়িতে কিছু দিতে পারেনি। আমার শাশুড়ী বলেছিল,তোমার বাবা কি ভিক্ষা করে? মেয়ের শশুর বাড়িতে কিছু দিতে পারে না কেন? বাবাকে এত বড় কথা বলাতে বুকটা ছিঁড়ে গিয়েছিল। তাই বাবার আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার পরেও বাবাকে বলেছি,ঈদে আমার শশুর বাড়িতে কেনাকাটা করে দিতে।
বাবা আমার কষ্ট বুঝতে পেরে বাড়িতে ঈদের বাজার না করে। আমার শশুর বাড়িতে কেনাকাটা করে নিয়ে আসে।তনুর শাশুড়ীর হাতে শাড়ি দিতেই। শাড়িটা ভালো করে না দেখেই ছুঁড়ে দিয়ে বলে,এটা কোন কাপড়? ফকিন্নিরাও এই সব কাপড় পড়ে না।বাবা চোখ লজ্জায় নিচু করে রাখে।তনুর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল।তনু বারবার হাসানের দিকে তাকাছিল।হাসান কিছু বলবে এ আশায় ছিল তনু।কিন্তু হাসান কিছুই বলে না।
বাবা মাথা নিচু করে তনুর বাসা থেকে বের হয়ে যায়। যাওয়া সময় শুধু তনুর মাথায় হাত রেখে বলে গেল,ভালো থাকিস মা।তনু দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে।দরজা বন্ধ করতেও ভুলে যায়। বাবাকে কত মানুষ শ্রদ্ধা করে। সম্মান করে। আজ সেই বাবাকে অপমানিত হয়ে চলে যেতে দেখে নিজেকে শুধু অপরাধী মনে হচ্ছিল তনুর।তাই কাউকে কিছু না বলে বারান্দায় এসে কাঁদছে।
হাসান তনুর রাগে কিছুটা ভয়ই পেল।কারণ এমন চেহারা আগে দেখনি তনুর।তনুকে মৃদু স্বরে বলল,রাগ করেছো নাকি মার কথায়? আরে মাকে তো চিনোই।এত কিছু ভেবে বলে না।
তনু রাগে এবার ফেটে পড়লো।তনু বলল,ও আচ্ছা। শিখে রাখলাম।আজ আমার বাবা যে সম্মান পেলো।কাল থেকে তোমার বাবা মা ভাইরা আমার কাছে এমনটাই পাবে।তখন দোষ দিও না।আর অন্য কোন বউয়ের বাবার বাড়ি থেকে শাক পাতা এলেও তোমার মার খুশি দেখে কে।আমার অসুস্থ বাবা এত কিছু কষ্ট করে এনেও অপমানিত হলো।আর তুমি হা করে সব দেখলে।অন্য কোন ছেলের শশুর বাড়ির মানুষকে এমন ভাবে অপমানিত করতে পারে না। কারণ অন্য ছেলেদের ভয় পায়।আর তুমি আমাকে সবার সামনে দাবিয়ে রাখো।তাই এসব সহ্য করতে হয়।শুধু নিজের পছন্দে বিয়ে করার জন্য এত খোঁটা শুনতে হয়।তোমার বাবা মায়ের পছন্দের কম শিক্ষিত ধনী বাপের মেয়েকে বিয়ে করতে।তাহলে এত কিছু হতো না।আজ আমার বাবাকে ছোট করে প্রমাণ করলে তোমরা কেমন মানুষ। যারা অন্যকে সম্মান করতে জানে না।তারা সম্মান পায়ও না।মনে রেখো কথাটা।আমার বাবা তার সর্বস্ব দিয়ে আমাদের দুই বোনকে মানুষ করেছে। তার বিনিময়ে আজ যা পেলো।তার ক্ষমা আমি যেমন পাবো না।তুমি আর তোমার পরিবারও পাবে না।
আমার বাবা মা যে শিক্ষা দিয়েছিল তা আজ থেকে ভুলে গেলাম।তোমাদের দেওয়া শিক্ষা মতো চলবো আজ থেকে। মেয়ের বাবা মা কি মানুষ না? আমার বাবা মা কি আমাকে জন্ম দেয়নি? আমাকে মানুষ করেনি? আমি যদি আমার পুরো পরিবার ছেড়ে এসে।তোমার পরিবারকে আপন মনে করে চলি।তবে তোমাদের কেন এত কষ্ট হয় আমার পরিবারকে সম্মান করতে?তনু বলেই ফেললো,হাসান রাস্তায় যারা ভিক্ষা করে প্রকৃত ভিক্ষুক তারা নয়।আসল ভিক্ষুক তারা,যারা সব থেকেও অন্যের কাছে আশা করে। লোভ করে।
কথা গুলো বলে তনু আর দাঁড়ালো না।ঘরে চলে আসলো।
তনুর মেবাইলে ছোট বোনের কল আসলো।তরু কাঁদছে আর বলছে,তারাতাড়ি আয় আপা।বাবা রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে। পাড়ার কয়েক’জন বাবাকে বাসায় নিয়ে এসেছে।হসপিটালে যাচ্ছি। চলে আয় আপা।তনু তরুর কথাগুলো শুনছে ঠিকই। কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারছে না।গলা ধরে আছে। কথা বের হচ্ছে না।তরুকে আসছি বলে কলটা কেটে দিলো।
পিছনে দাঁড়িয়ে হাসান সব শুনছিল।বুঝতে পারলো কি হয়েছে। তনুকে বলল,আমি সাথে যাচ্ছি চলো।তনু,হাত দেখিয়ে হাসানকে থামতে বলল।বাবাকে মেরে ফেলেছো তোমরা।আমার বাবার কিছু হলে তোমাদের কাউকে ছাড়বো না আমি।খুনি তোমরা। বাবা ছাড়া আর কেউ নেই আমাদের মাথার উপর। মা আর ছোট বোনটার কি হবে? আর তনু তো বাবাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।দৌড়ে বের হয়ে গেল তনু।এ পথ যেন আজ শেষ হচ্ছে না।বাবা বাবা ওবাবা…..
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social profiles