গল্পঃ-নিয়তির চাওয়া (প্রথম পর্ব)

image editor output image49043491 1635362341511
Read Time:7 Minute, 24 Second

মা বাবা মৃত্যুর পর নানা বাড়িতে মানুষ হয়েছি। নানা নানি যতদিন বেঁচে ছিলেন খুব আদরে আর ভালো ছিলাম। আমি যখন এইচএসসি পাশ করলাম নানা মারা গেলেন।নানি মারা গেছেন তারও আগে। তখন থেকেই শুরু হলো কষ্ট। মামা মামী কিছুতেই কলেজে ভর্তি হতে দিবেন না।বিয়ে দিয়ে দিবেন।তারা আমার মায়ের নামে যে সম্পত্তি আছে তা থেকে এক টুকরো সম্পদও দিবেন না বলে দিয়েছেন। কারণ এত বড় করতে তো কম টাকা লাগে নাই।

আমার বাবার সম্পত্তি আমি পাইনি। দাদা আর চাচারা আমাকে গ্রহণ করেননি।কারণ আমার বাবা মা নিজেদের পছন্দে বিয়ে করেছিল। একদিন মা অসুস্থ হওয়ায় বাবা মা আর আমি একসাথে হাসপাতালে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা বাস এসে আমাদের রিকশাকে ধাক্কা দেয়।বাবা মা ওখানেই নাকি মারা যায়।আমি কীভাবে বেঁচে যাই জানি না।তখন আমার বয়স মাত্র তিন বছর। তখন থেকেই নানার বাড়িতে আমি।

মামী একদম বাহিরে যেতে দেন না। তবুও মাঝে মাঝে বাজারে যেতে পারি।এটা ওটা ঘরের জন্য কিনতে মামী বাজারে পাঠায়।আমার মামাতো ভাই জীবন খুব দুষ্টু।কিন্তু মামাতো বোন মিলি খুব ভালো। ওকে যদি কেউ বলে তোমরা কয় ভাই বোন? ও বলে,আমরা দুই বোন এক ভাই। সবাইকে বলে অনামিকা আপু আমার বোন।সত্যি এমন সম্পর্ক হয় না।

একদিন মিলি এসে একটা চিঠি দিল। আমার ছোট বেলার বান্ধবী রিতা চিঠি দিয়েছে। ও ঢাকায় চলে যাচ্ছে ভার্সিটিতে ভর্তির হওয়ার জন্য। আর আমাকে জানিয়ে দিল এখানে কলেজে ডিগ্রিতে হলেও ভর্তি হতে।নানার খুব ইচ্ছা ছিল আমাকে ঢাকায় ভার্সিটিতে পড়াবে।আজ সবকিছু অপূর্ণ স্বপ্ন হয়ে গেল।ভর্তি হতে টাকা লাগবে।কোথায় পাবো টাকা? হঠাৎ মনে পড়ে গেল মায়ের কানের দুল দিয়েছিল নানা আমাকে।এটা বিক্রি করলেই ভর্তি আর বই হয়ে যাবে।মামীকে খুশি করতে হবে।তাহলেই বের হতে পারবো।

পরের দিন খুব ভোরে উঠে সমস্ত কাজ ও রান্না করে মামীকে গিয়ে বললাম,মামী রিতা ঢাকায় চলে যাচ্ছে। ওর সাথে দেখা করে আসি? আর তো দেখা হবে না।মামী রাগ করে বললেন, তাহলে ঘরের সব কাজ কে করবে মহারাণী? আমি বললাম, সব কাজ আর রান্না করে রেখেছি।প্লিজ মামী যাই? বিকাল হলেই চলে আসবো।ও আমার ছোট বেলার বন্ধু। আমার খুব কান্না পাচ্ছিল।যদি যেতে না দেয়।কাজ সব করেছি শুনে মনে হয় মামী একটু নরম হলেন।বললেন, আচ্ছা যাও।কিন্তু সন্ধ্যার আগে চলে আসবে।নাস্তা বানাতে হবে৷ আমি আর দেরি না করে চলে গেলাম কলেজে।

স্বর্নকার আমাদের পরিচিত। ওনাকে বললাম, খুব দরকার টাকার।এটা বিক্রি করতেই হবে। উনি দুল জোড়া দেখে বললেন,এটা তো আমার এখান থেকেই বানানো।তাই কিনে নিলেন উনি।টাকার চিন্তা শেষ হলো।

আমি ভালো ছাত্রী হওয়ায় সবাই আমাকে চিনতো। স্যারদের সাথে কথা বললাম।তারা নানাকে খুব শ্রদ্ধা করতেন।নানা এই কলেজের অনেক ছাত্র ছাত্রীদের সহযোগিতা করেছেন ভিন্ন সময়।তাই আজ আমার বিপদে ওনারাও সহযোগিতা করলেন।আমার ভর্তির সব দায়িত্ব প্রিন্সিপাল স্যার নিলেন।

আমি ভর্তি হয়ে রিতার বাসায় গেলাম।সত্যি তো ওর সাথে আর দেখা হবে না।রিতা শুনে খুব খুশি হলো।কিন্তু আমার বুকের ভিতর অনেক কষ্ট মজা হলো।আজ বাবা মা থাকলে বা নানা থাকলে রিতার মতো আমারও ভার্সিটিতে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হতো। রিতার সাথে সময়টা খুব ভালোই কাটলো।নানা মারা যাওয়ার পর এমন সুন্দর সময় পাই না।রিতা বলল,গিয়ে আমাকে নতুন ঠিকানা দিবে।আর ওর বাবার মোবাইল নম্বর তো আছেই আমার কাছে।

বাড়িতে ফিরে এসে দেখি মামী খুব খুশি। মামা আমার কাছে এসে বললেন,তোমার ভাগ্য অনেক ভালো। তোমার জন্য ঢাকা থেকে অনেক ভালো একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। তারা অনেক ধনী। তোমাকে মাথায় করে রাখবে।আমাদের কিছুই দিতে হবে না।তারাই সব দিয়ে সাজিয়ে নিয়ে যাবে।এখানে বগুড়ায় তাদের অনেক বড় বিজনেস। ছেলের বাবা আমাকে এই অফিসে ম্যানাজার হিসাবে নিচ্ছে। সবকিছু বদলে যাবে অনামিকা। আমি ওদের পাকা কথা দিয়ে এসেছি। হাতে পনের দিন সময় আছে বিয়ের জন্য। আগামী শুক্রবার তারা আংটি পড়িয়ে যাবে।

আমি যেন পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকলাম।কানে যেন আর কোনো কথাই ঢুকছে না।মামা তার স্বার্থের জন্য আমাকে ব্যবহার করছে।নানা থাকলে এমটা চিন্তাও করতে পারতেন না।আমার সবকিছু চারদিকে ঘুরতে লাগলো। আমার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বোবা কান্নায় ডুবে গেলাম।চিৎকার করার শক্তি যেন নেই আমার। নিজেকে নিজে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেষ্টা করছি আমি। নানার স্বপ্ন পূরণ করার অঙ্গীকার নিয়ে পথ চলতে শুরু করেছি মাত্র। মনে মনে শুধু আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছি।

আজ ছেলে পক্ষ দেখতে আসলো। ছেলে এসে আমাকে দেখে হয়তো বলেছে পছন্দ হয়েছে। আমি মামা মামীকে এই কয়দিন অনেক বুঝিয়েও বিয়ে ভাঙতে রাজি করাতে পারিনি। আমার যে তারা ছাড়া আর কেউ নাই। তাই তাদের কথাই মানতে হলো।দেখে তাদেরকে ভালো মনে হলেও আমি তাদের সাথে কোন কথাই বলতে পারলাম না।কেউ কিছু বলার সুযোগ দিল না।আংটি পড়িয়ে চলে গেল তারা।আমি যেন অচেনা অজানা পথে যাত্রা করছি।

চলবে,,,,
দুই পর্বের গল্প

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

4 thoughts on “গল্পঃ-নিয়তির চাওয়া (প্রথম পর্ব)

  1. Hey there! This is my first comment here so I just wanted to give a quick shout out and tell you I really enjoy reading your blog posts. Can you suggest any other blogs/websites/forums that go over the same topics? Thanks!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social profiles