মাতৃত্বের ডিপ্রেশন

ডিপ্রেশন
Read Time:9 Minute, 3 Second
মা হওয়ার আনন্দ সত্যি বলে বোঝানো যাবে না। কতটা ভালো লাগা কাজ করে মনে তা শুধু একটা মা’ই জানে।আবার তা যদি হয় অনেক অপেক্ষার ফল। তাহলে তো কথাই নাই।
তবে এত ভালো লাগার মধ্যে কিছু মানসিক ও শারীরিক সমস্যাও থাকে।যা হয়তো জীবনে প্রথম আসে। বা হঠাৎ পরিবর্তন হতে থাকে।
শারীরিক অসুস্থতা তো লেগেই থাকে। সাধারণত শরীর খারাপ থাকলে মন মেজাজ এমনিতেই খারাপ থাকে।এটা তো বলার কিছু নেই। কিন্তু আমাদের পরিবারের মানুষ বা বাহিরের মানুষ তা মানতে নারাজ।
কারো কারো তো শরীরের অবস্থা এতো খারাপ থাকে যে,বিছানায় পড়ে থাকতে হয়।এটা কত বড় কষ্ট। এটা ঐ মা’ই বলতে পারবে।আর যত কষ্টই হোক।আপনি ঔষধ পাবেন না।অন্য স্বাভাবিক সময়ের মতো। তাই কষ্ট সহ্য করতেই হবে।
আচ্ছা থাক সেসব কথা। মানুষ তো বলেই, মা হবা আর কষ্ট করবে না।তা কি হয়?
না, তা হয় না।এটা সবাই জানি।মা হওয়া সহজ নয়।
তো তোমরা যারা সহজে বাবা,দাদা,দাদী,নানা,নানী,খালা ফুফু,চাচা মামা হচ্ছো।তারা কিছু কষ্ট করো।আর মায়ের কষ্ট কমিয়ে দেও।বাবার কষ্ট তো শুরু হয়।সন্তান পৃথিবীতে আসার পর।কিন্তু তার দায়িত্ব থাকে সন্তান পৃথিবীতে আসার আগ থেকেই।
কেন বললাম? কারণ এসময় একজন সন্তান সম্ভবা মা চায়। স্বামীর আদর,মায়া,পরিচর্যা, ভালোবাসা। এ সময় একটা মেয়ে কঠিন সময় পাড় করে। অনেকে চাকরি ছেড়ে ঘর বন্দী হয়।তাই মানসিক চাপে থাকে।অনেকে পরিবারের সাহায্য সহযোগিতা পায় না।একা থাকে।
সব মিলিয়ে তৈরি হয় ডিপ্রেশন। এসময় মা চায় তার সন্তানের জন্য প্রতিটি মানুষের মনে ভালোবাসা থাকুক।আর তা ঐ মায়ের মাঝে তারা ঐ ভালোবাসা স্থাপন করুক।কিন্তু খুব কমই তা হয়।
স্বামীর খোঁজ নেওয়া। যে,সে খেয়েছে কিনা? বিশ্রাম নিচ্ছে কিনা? কি করছে? খারাপ লাগে কিনা? অন্য কিছু খাবে কিনা? এসব কেয়ার নেওয়ার বিষয় গুলো খুব মিস করে মায়েরা।তাদের কাছে এগুলো ভালোবাসার প্রকাশ মনে হয়।সন্তান ও মায়ের জন্য মায়ের মানসিক শান্তি খুব প্রয়োজন। এটা এতো আধুনিক যুগেও আমরা বুঝতে পারি না।বা মানি না।
ঘরে থাকতে থাকতে অসহ্য মানসিক অশান্তি চলে আসে।একটু বেড় হওয়া। পছন্দের খাবার খাওয়া। খুব সুন্দর মানসিক শান্তি দেয়। তাছাড়া মায়ের মানসিক পরিস্থিতি ভালো হলে সন্তানও ভালো থাকে।
এসময় কিন্তু আগের সেই সুন্দর স্লিম ফিগার থাকে না।তাই তাকে মাঝে মাঝে সুন্দর বলুন সবাই। সে আগের মতো চিকন না থাকলেও।তার চেহারার অসম্ভব সুন্দর একটা ভালো লাগা থাকে।মায়ের চেহারা সবসময়ই চমৎকার হয়।স্নিগ্ধ একটা ভাব থাকে।এটা দেখার চোখ ও মন লাগে।একটা মেয়ে যদি তার সারাজীবনের ভালো লাগা বা যত্নে গড়া সৌন্দর্য ত্যাগ করতে পারে। তবে তাকে সুন্দর বলা কঠিন কাজ কি?
নিজের সন্তানের মায়ের মাথায় একটু তেল দিয়ে চুলটা বেঁধে দিলে কি খুব বেশি কষ্ট হবে? সে তো এই শরীরে আপনার বা আপনার পরিবারের জন্য কতকিছু করে।যদি আরও এক বা দুটো সন্তান থাকে। আর আবার মা হয়।তাহলে এমনিতেই মায়ের কাজের চাপ অনেক বেশি থাকে।
অনেকের জন্য এসময়ে নতুন কিছু সমস্যা তৈরি করে পরিবারের মানুষজন।যেমন, ছেলে না মেয়ে? কালো না ফর্সা?আরও কত কি।আরে ভাই আল্লাহ সন্তান দিচ্ছে। খুশি হন।অনেকের তো এই সুখ পাওয়ার ভাগ্যও হয় না।আপনি পাচ্ছেন এই সুখ। এটাই বড় কথা। শুকরিয়া আদায় করেন।আল্লাহর তৈরি মানুষের চেহারা নিয়ে কথা বললে।আল্লাহকেই অসম্মান করা হয় না কি?আল্লাহ যা দিবে।তা আপনার ভালোর জন্যই দিবে।
প্রচন্ড রকম মুড সুইং হয় এসময়। মানে হঠাৎ রাগ হয়।মেজাজ খিটখিটে হয়।আবার এই কান্না পায়।এই আবার ঠিক হয়ে যায়। এটা শারীরিক সমস্যার কারণে হয়।পড়ে ঠিক হয়ে যায়।তবে এসময়ে পরিবারের বিশেষ করে স্বামীর তা বুঝতে হয়।
বাচ্চা হওয়ার পরেও অনেক সমস্যা পোহাতে হয় মাকে।একা বাচ্চার দেখা শোনা করা খুব কঠিন। মায়ের শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সন্তানকে সবাই মিলে দেখা উচিত। সবার সাহায্য লাগে এসময়।কারণ বাচ্চার জন্য সঠিক সময় খাওয়া বা গোসল হয় না মায়ের।আবার বিশ্রাম নিতেও পারে না।অনেক বাচ্চা রাতে কম ঘুমায়।তাই মায়ের ঘুম হয় না।এতে শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি ডিপ্রেশনও হয়।
কেউ যদি ভাবে পুরুষ মানুষ বাহিরে কাজ করে এসে আবার বাসায়ও খাটবে!এটা কাজ না।বা খাটনি না।এটা বাবার ভালোবাসা। স্বামীর ভালোবাসা বউয়ের জন্য। এতটুকু তো করাই যায় তাই না? বিশেষ করে মাকে একটু খাওয়ার জন্য সময় দেওয়া। গোসলের জন্য সময় করে দেওয়া। একটু বিশ্রাম নিতে দেওয়া। এগুলো ঠিক মতে না হলে।শরীর আর মন দুটোই কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ে।একসময় এ জীবন মায়ের কাছে কষ্টের লাগে। এর প্রভাব কিন্তু বাচ্চার উপর পড়ে। বাচ্চাকে রাগে মাড়ে।বা নিজের উপর রাগ করে। এমনকি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কেও অস্থিরতা আসে।সময়টা খুব কঠিন। একে অপরের সাহায্য সহানুভূতি ছাড়া সম্ভব নয় সুন্দর জীবন চালানো।
আমরা সুখের জন্য যুদ্ধ করি।কত কঠিন কঠিন কাজ করি।অথচ ছোট ছোট অনুভূতি গুলো বুঝলেই কিন্তু খুব সুন্দর হয় সংসার। একে অন্যের পরিস্থিতি বুঝতে হবে।কারো একার কোন দায়িত্ব নয়।বা কোনটা কার দায়িত্ব। তা কিন্তু লিখে দেওয়া নাই। একজন সুন্দর ধীরস্থির স্বাভাবিক মনের মা’ই পারে। একটি সুস্থ সন্তান ও পরিবার দিতে।অন্য কেউ নয়।একজন মায়ের কষ্টকে বুঝতে চেষ্টা করি।একজন মেয়ের অনুভূতির যেন মূল্য দেই।কারণ একটা মেয়ের মা হওয়ার পথ নিদারুণ কষ্টের হয়ে থাকে।এসময়ে কঠিন হয়ে যায় একা চলা।মানসিক শান্তি ও শান্তনার দরকার হয় পদে পদে।
ডিপ্রেশন খুব খারাপ দিকেও যেতে পারে।তাই মায়ের যত্ন নিন।মায়ের সূক্ষ্ণ অনুভূতি গুলো বুঝুন।একজন কর্মজীবী নারীর জন্য পুরাপুরি গৃহিণী হওয়া কম মানসিক চাপের নয়।আর একজন গৃহিনী কখনোই নিজেকে সময় দিতে পারে না ঠিক মতো।নিরলস কাজ করে যেতে হয়।তাই তার কাজের প্রশংসা করুন।ভুল ধরা সহজ।কিন্তু ভুল মেনে নিয়ে চলা আনন্দের।
জানি না নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কতটা বুঝাতে পেরেছি। চেষ্টা করেছি আমার অনুভূতি গুলো বুঝাতে। সবাই ভালো থাকবেন।আর মায়েদের ভালোবাসবেন।
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

2,907 thoughts on “মাতৃত্বের ডিপ্রেশন