অনু শাহীনকে দেখাও না দেখার ভান করে রিকশায় উঠে যাচ্ছিল। কিন্তু শাহীন সামনে এসে বলল
— আমাকে দেখেও দেখ না মনে হচ্ছে? তা এতদিনে কি অন্য কাউকে কি পেয়ে গেছো? নাকি আমার চেয়ে ভালো কিছু পাবে মনে করছো?
শাহীনের কথাগুলো অনুর কানে না কলিজায় লাগল।কিন্তু এটা হয়তো শাহীন বুঝতে পারলো না। অনুর মনের আগুন জ্বলে উঠতে শুরু করলো।কিন্তু ভার্সিটির সামনে কোন সিনক্রিয়েট করতে চাইলো না অনু।তাই আস্তে করে বলল
— তুমি কি এই নোংরা কথাগুলো বলার জন্যই এসেছো?এতদিনে এটাই খুঁজে পেলে? এই নোংরামির জন্যেই চলে এসেছি। নতুন কাউকে খুঁজতে নয়।
শাহীন রাগে জ্বলতে লাগল।সে অনুর হাত ধরে রিকশায় তুলে সাথে উঠে বসলো।আর রিকশাওয়ালা কে বলল মিরপুর দশে যেতে(অনুদের বাসা)।
অনু নেমে যেতে চেয়েও নামলো না। আজ এর একটা বিহিত হয়েই য়াক। অনু ভেবেছিল শাহীন তার ভুল বুঝতে পারবে। অনুর কাছে এসে বলবে মা’কে বুঝিয়ে বলবে আর এমন না করতে। কিন্তু অনু শাহীনের কথায় বুঝতে পারছে সে ভুল আশায় বসে ছিল। অনুর খুব কান্না পেল।কিন্তু সে কাঁদলো না। অনু আর তার দূর্বলতা বা কষ্ট শাহীনের মতো মানুষের কাছে প্রকাশ করতে চায় না। এত নিম্ন মানসিকতা কি করে হয় একটা শিক্ষিত ছেলের?অনুর খুব খারাপ লাগছিল। তাই বলল
— কিছু বলার থাকলে বলে নেমে যাও। তোমার সাথে আর এক মূহুর্তের জন্য থাকতে চাই না।
শাহীন শক্ত করে অনুর হাত ধরে বলে
— এত সহজে পাড় পাবে ভাবছো? তা হতে দিব না। সমাজে আমাকে ছোট করে তুমি ভালো থাকবে।আর মানুষ আমাকে আর আমার মা’কে খারাপ বলবে।এটা আমি কিছুতেই হতে দিচ্ছি না। তোমাকে যে ভাবেই হোক বাসায় নিয়ে যাবো। তারপর তোমার আসল জায়গা কোনটা বুঝিয়ে দিব। সেদিন যদি তোমাকে উচিত শিক্ষা দিতাম।তাহলে আজ এত বড় সাহস হত না। ছেড়ে দেওয়াই ভুল হয়েছে। ভার্সিটির নাম করে নোংরামি করবে।আর আমার মা কিছু বলেছে তো তাকেই রাগ ঝারবে।এসবের ফল এবার তোমাকে বুঝিয়ে দিব।
অনু আর সহ্য করতে পারছিল না। রিকশাওয়ালাকে থামতে বলে মাঝ পথে নেমে গেল। শাহীনও ওর সাথে নামলো।অনু ওর পিছনে পিছনে শাহীনকে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে গেল। অনু রাগে তখন কাঁপছিল। শাহীনকে বলল
— আর এক পাও যদি আমার পিছনে এসেছো তো আমি চিৎকার করবো।আর পুলিশ ডেকে বলবো তুমি আমার সাথে খারাপ আচরণ করছো। জেলের ভাত এবার সত্যি খাওয়াবো।
অনুর কথায় শাহীনের গায়ে জ্বালা ধরলো। সে রেগে গিয়ে অনুর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। অনু চেষ্টা করেও যখন হাত ছাড়াতে পারলো না। তখন চিৎকার করতে লাগল।বেশ কয়েকজন মানুষ এগিয়ে আসলো।তারা অনুর হাত ছেড়ে দিতে বলল।কিন্তু অনুর হাত ছেড়ে না দিয়ে শাহীন তাদের শাসিয়ে বলল
— এটা আমার বউ। আমি হাত ধরবো না গলা ধরবো তাতে আপনাদের কি? লোকগুলো রেগে গেল বলল বউ তো এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? উনাকে ছেড়ে দেন।কোন সমস্যা হলে বাসায় সমাধান করেন। রাস্তায় এসব কেন করেন? দেখে তো শিক্ষিত মানুষ মনে হয়।
অনু বারবার বলতে থাকে হাত ছেড়ে দাও।আমি ব্যথা পাচ্ছি। কিন্তু অনুর কথা না শুনে আরও শক্ত করে ধরে শাহীন।
হঠাৎ পিছন থেকে একজন এসে শাহীনের গালে কষে একটা চড় মারে। অনু তাকিয়ে দেখে বয়স্ক একজন পুলিশ দাঁড়িয়ে। বুঝতে পারে এবার সে ছাড়া পাবে।
শাহীন অনুর হাত ছেড়ে বলে
— এত বড় সাহস কি করে হলো আপনার? আমার গায়ে হাত দিলেন কোন অপরাধে? আমার বউ এই মেয়ে। আমি যা ইচ্ছা করতে পারি।
পুলিশ লোকটা বলে কে দিয়েছে এই অধিকার? স্বামী হলেই কি বউ তার গোলাম? রাস্তায় বউকে এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? আবারও তর্ক করেন। জেলে নিয়ে কাপড় খুলে চামড়া তুলে নিব। কি সমস্যা হয়েছে জানতে চায় অনুর কাছে।
অনু বুঝতে পারছিল সমস্যা আরও বাড়তে পারে।তবে এখান থেকে চলে যাওয়াই তার জন্য নিরাপদ। অনু বলে
— সে আমার হাসবেন্ড। কিন্তু তার সাথে আমি যাবো না। আমি আমার বাবার বাসায় যাবো।সে আমাকে জোর করে তার সাথে নিয়ে যাচ্ছে।
পুলিশ শাহীনকে চলে যেতে বলে। নয়তো থানায় নিয়ে যাবে বলে হুমকি দেয়। শাহীন তবুও বলে যায়।অনুকে দেখে নিবেই। এটা এখানেই শেষ নয়। অনুও বুঝতে পারলো এটা এখানেই শেষ হবে না। বরং অনেক কিছুর শুরু হলো। অনুর ভয় হচ্ছিল যদি আবারও শাহীন পিছনে পিছনে আসে। তবুও সে একটা সিএনজি নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিল। শাহীন আর পিছনে আসেনি।
বাসায় ফিরে অনু তার বাবা আর মা’কে সব খুলে বলে। তারা খুব রেগে যায়। শাহীনের মা আর শাহীনের সাথে সরাসরি কথা বলতে চায়। কিন্তু অনুর মামা,চাচারা কেউ রাজি হলো না শাহীনের সাথে অনুর বিষয় নিয়ে কথা বলতে যেতে।তারা মিটমাট চায়। ছাড়াছাড়ি হোক তা কেউ চায় না। অনুর ফুফু দিনাজপুরে থাকে।তাই সে আসতে পারলো না।কিন্তু অনুর বাবাকে থানায় একটা জিডি করে রাখতে বলল। তারপরও কিছু হলে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। আর অনুর পরীক্ষাও শেষ হোক।
অনুর বাবা থানায় জিডি করলো।আর শাহীনকেও কল করে বলল
— অনুর সাথে যা করেছে তার ফল ভালো হবে না।এরপর এমন কিছু করলে সরাসরি কেস করে দিবে। শাহীন যেন আর অনুর ধারের কাছেও না আসে। তাদের মেয়ে কোন শয়তানকে আর দিবে না। এত বড় সাহস এত বাজে কথা কি করে অনুকে বলে?
শাহীনের এতটুকু লজ্জা লাগেনি। সে নির্লজ্জ ভাবে বলে
— মেয়েকে জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু ভালো শিক্ষা দিতে পারেন নাই। বিয়ের পর পড়ালেখার নাম করে ছেলেদের সাথে টাংকি মারে। আবার আমাকে উল্টো কথা শোনান? নিজের মেয়েকে ঠিক করেন। এমন চরিত্রহীন মেয়ের সাথে লুচ্চা লাফাঙ্গা ছেলে সংসার করবে।আমার মতো শিক্ষিত ভালো পরিবারের ছেলে না। তালাকের কাগজ পাঠিয়ে দিব। রাখেন আপনার চরিত্রহীন মেয়েকে। মায়ের কথা শুনে তাকে আনতে যাই।জেদ দেখায় আমাকে,পুলিশের ভয় দেখায়। আমি ছেড়ে দিলে এই মেয়ে নিয়ে সমাজে টিকে থাকা দায় হয়ে যাবে।কেস তো আমি দিব।চুরির কেস দিব। আমার বাসা থেকে টাকা, গয়না চুরি করে পালিয়ে গেছে বলে কেস দিব। বাপ মেয়ে দুই জনকে জেলের ভাত খাওয়াবো। আমাকে জেলের ভয় দেখায় এত বড় সাহস!
শাহীন যা বলার বলে রেখে দিল।কিন্তু অনুর বাবা সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। অনু আর তার মা দারোয়ান সহ তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নেয় অনুর বাবাকে। খবর পেয়ে অনেক আত্মীয়স্বজনেরা হাসপাতালে আসে।তারা যতটা না অনুর বাবাকে দেখতে আসে তারচেয়ে বেশি অনুকে মিথ্যা অপবাদ দিতে আসে। তারা ভুলেই যায় এটা হাসপাতাল। অনুর ভাই আদনানও চলে আসে হোস্টেল থেকে। দুই দিন পর হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে অনুর বাবা।
চলবে,,,,,